প্রকাশিত: ৪:৪৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০১৯
ডায়াল সিলেট ডেস্ক:আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গ-সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ। ক্ষমতাসীন দলটির ভ্যানগার্ডও বলা হয় যুবলীগকে। এই সংগঠনটি বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলায় রাজপথে সাহসী ভূমিকা রেখে আসছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে প্রায় প্রতিটি সম্মেলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব পেয়েছে যুবলীগ। এ কারণে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলায় এবং বিরোধী দলে (আওয়ামী লীগ) থাকলে বিক্ষোভে রাজপথ কাঁপিয়েছে যুবলীগ। দেশের সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগ যে সবচেয়ে শক্তিশালী, সেটি রাজনীতি সচেতনরা এক বাক্যে মেনে নেবেন। দৃশ্যমান এই সত্যটি যারা মানতে চাইবেন না তারা শুধু তর্কের জন্যই এমনটি করবেন।
সংগঠন হিসেবে যুবলীগের প্রশংসা যেমন আছে, তেমনি বদনামও কম নয়। সেটি নেতৃত্বের কারণেই। চলমান মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে যুবলীগের প্রভাবশালী নেতাদের নাম চলে আসছে। অনেকে গ্রেফতারও হয়েছেন। অনেকে গ্রেফতারের অপেক্ষায়। প্রতিষ্ঠার পর এবারের মতো এতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যুবলীগ কখনও পড়েছে কিনা সেটি তর্কসাপেক্ষ ব্যাপার। যুবলীগ নেতাদের টেন্ডারবাজি, ক্যাসিনো ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে টানা তিনবার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের অর্জন ম্লান হতে বসেছে।
১৯৭২ সালের নভেম্বরে শেখ ফজুলল হক মণির হাত ধরে যুবলীগের পথচলা শুরু। এর পর থেকে যারাই যুবলীগের নেতৃত্বে এসেছেন প্রত্যেকেরই দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সম্পন্ন ছিলেন। তাদের মেধা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল আকাশচুম্বি।
যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন আমির হোসেন আমু, মোস্তাফা মহসীন মন্টু, ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমদের মতো দক্ষ সংগঠক। তাদের কোনো কমিটি নিয়েই এতটা সমালোচনা হয়নি, যতটা হচ্ছেন বর্তমান কমিটি নিয়ে। যুবলীগের খোদ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সংগঠনের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর উঠেছে। তাদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দুর্নীতির মাধ্যমে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা অর্জনের। কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসার।
এই যখন অবস্থা তখন এবার নতুন কংগ্রেসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আওয়ামী যুবলীগ। ক্ষমতাসীন দলের এই যুবসংগঠনের ৭ম কংগ্রেস আগামী ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় এই কংগ্রেসে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনিয়ম-দুর্নীতিবিরোধী চলমান শুদ্ধি অভিযানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝড় গেছে যুবলীগের ওপর দিয়ে। ক্যাসিনো কারবার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারাজিসহ একাধিক অভিযোগ সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের নামে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে এত এত অভিযোগ উঠেছে যে, পুরো সংগঠনই দূষিত হয়ে গেছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। এ কারণে গোটা যুবলীগকেই ঢেলে সাজাতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যুবলীগের দীর্ঘদিনের বলয় ভাঙতে চান শেখ হাসিনা। এর আগে আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সরাসরি যুবলীগের অভিভাবক হিসেবে সংগঠনটির দেখভাল করতেন। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী নিজেই যুবলীগের কমিটির বিষয়টি দেখবেন। ইতোমধ্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের শীর্ষ নেতা নির্বাচনের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন তিনি।
কিছুদিন আগেও যে নেতা সংগঠনের নেতৃত্ব পেতে মুখিয়ে ছিলেন তিনিও আজ নীরব। শীর্ষ কয়েক নেতাও আছেন আতঙ্কে। নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা ভেতরে ভেতরে কাজ করলেও প্রকাশ্যে আসতে নারাজ। যদি না ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম এসে যায়! বেশিরভাগ নেতাই কংগ্রেসে প্রার্থী হবেন না বলে জানান গেছে। কারণ তাদের অনেকেই ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িত নেতাদের কাছ থেকে সুবিধাভোগী। প্রার্থিতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে সোজাসাপ্টা উত্তর- ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) দিলে আছি, না দিলে নাই।’ তবে প্রকাশ্যে তৎপরতা না থাকলেও সবাই তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে।
এবারের যুবলীগের কাউন্সিলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে কমিটিতে, এটি নিশ্চিত। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী, দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ নেতারা বাদ পড়বেন। নেতৃত্বে আনা হবে ক্লিন ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের। আসতে পারে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ। ইতিমধ্যে নতুন নেতৃত্বের সন্ধান শুরু করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন ইমেজকে প্রাধান্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ এই সংগঠনের বর্তমান ভাবমূর্তি তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখন এমন নেতা প্রয়োজন, যারা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও সেটা ধরে রাখবেন।
যুবলীগের কংগ্রেস ও নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুবলীগে কখনও ভোট হয়নি। প্রার্থীও হন না কেউ। তবে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেন অনেকে। কংগ্রেসের ২য় অধিবেশনে আওয়ামী লীগ সভাপতি যুবলীগের নেতৃত্ব ঘোষণা করেন।
আবারও সাধারণ সম্পাদক কিংবা চেয়ারম্যান পদে থাকতে চান কিনা জানতে চাইলে ৬৫ বছর বয়সী হারুনুর রশিদ বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) যাকে চাইবেন তার নেতৃত্বেই যুবলীগ চলবে। তবে নেতৃত্বের বিষয়ে বয়সের সঙ্গে অভিজ্ঞতাও দেখা উচিত।
ইতিমধ্যে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষু্ণ্ণকারী নেতাদের বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছেন। অপরাধী যেই হোক কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার পর চলমান অভিযানে অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার ও রিমান্ড আতঙ্কে আছেন। ফলে আসন্ন সম্মেলনে প্রার্থিতা হওয়া-না হওয়া নিয়েও দোলাচলে আছেন অনেকে।
যুবলীগের আসন্ন সম্মেলনে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বাদ পড়ার ঝুঁকিতে আছেন বলে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান আড়ালে চলে গেছেন। সবশেষ গত শুক্রবার দলটির প্রেসিডিয়াম সভায় অংশ নেননি ওমর ফারুক। তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো হোতাদের কাছ থেকে সুবিধাভোগ করার অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হন হারুন-অর-রশিদ। ১৪৯ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর অনেকটাই একচ্ছত্র অধিপত্য ছিল। পরে আরও দুজনকে নিয়োগ দিয়ে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়।
সংগঠনে ওমর ফারুকের কথাই ছিল শেষকথা। আওয়ামী লীগের একমাত্র সংগঠন, যেখানে কর্মীরা তাদের সংগঠনের প্রধানকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতে হয়।
এদিকে ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করা হলেও যুবলীগের আর সম্মেলন হয়নি। যুবলীগের দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন একক অধিপত্য থাকা যুবলীগ চেয়ারম্যানের ইন্ধনেই বেপরোয়া হয়ে উঠে সম্রাট-খালেদরা।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech