অপারেশনের পর দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি, বড়লেখায় চক্ষু চিকিৎসককে লিগ্যাল নোটিশ

প্রকাশিত: ৪:৪৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০১৯

অপারেশনের পর দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি, বড়লেখায় চক্ষু চিকিৎসককে লিগ্যাল নোটিশ

বড়লেখা প্রতিনিধি:অপারেশনের দেড় মাস পরও মায়ের চোখের দৃষ্টি না ফেরায় চক্ষু চিকিৎসককে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন এক আইনজীবী। বড়লেখায় হামিদা খাতুন চৌধুরী চক্ষু হাসপাতাল ও ফ্যাকো সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অপারেশন হয় ওই আইনজীবীর মায়ের। গত ১৬ অক্টোবর ডা. মিফতাহুল হোসেন চৌধুরীকে এ নোটিশ পাঠান মৌলভীবাজার জজ কোর্টের আইনজীবী জিল্লুর রহমান।

লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে ওই চিকিৎসককে হাসপাতাল পরিচালনার যাবতীয় বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শনসহ জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যতায় আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

নোটিশে বলা হয়, গত ২২ আগস্ট আইনজীবী জিল্লুর রহমান তার মাকে নিয়ে হামিদা খাতুন চৌধুরী চক্ষু হাসপাতাল ও ফ্যাকো সেন্টার নামের ওই প্রতিষ্ঠানে যান। সেখানে সেবিকা পরিচয়দানকারী এক নারী ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বদরুল হোসেন তার মায়ের চোখ পরীক্ষা করেন। চোখ দেখে তারা ছানি অপারেশনের কথা বলেন। কিন্তু এরা কেউই চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা প্যাথলজিস্ট নন। চিকিৎসকও নিজে চোখ না দেখে একই কথা বলেন। পরে অপারেশনের মূল্যও নির্ধারণ করা হয়। এরপর রোগীকে ভেতরের একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপারেশন শেষে রোগীকে নিয়ে চিকিৎসক বের হয়ে বলেন, দুই একদিনের মধ্যে দৃষ্টি শক্তি ফিরে আসবে। আইনজীবী তখন টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু চার থেকে পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও দৃষ্টি শক্তি না ফেরায় ওই আইনজীবী তার মাকে নিয়ে হাসপাতালে যান।

কয়েক দফায় হাসপাতালে গেলে তাকে জানানো হয়, আরো একমাস লাগবে দৃষ্টিশক্তি ফিরতে। চিকিৎসক তখন বলেন, ওষুধ খাওয়ান। ওষুধ পরিবর্তন করে দিচ্ছি। সব ঠিক হয়ে যাবে।

দেড় মাস অপেক্ষার পরও রোগীর দৃষ্টি শক্তির উন্নতি না হওয়ায় আইনজীজীর সন্দেহ হয়। তিনি খোঁজ নেন হাসপাতালের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে। তখন জানতে পারেন সেবিকা পরিচয়দানকারী বা যারা তার মায়ের চোখ পরীক্ষা করেছেন কারোই এই বিষয়ে সনদ নেই। আবার হাসপাতাল পরিচালনারও বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। গত ১১ অক্টোবর আইনজীবী পুণরায় ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চিকিৎসকের সাথে কথা বললে চিকিৎসক বিভ্রান্তিমূলক কথা বলেন। একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, ছানির সমস্যা ছিল না, রেটিনার সমস্যা ছিল। এ অবস্থায় চিকিৎসককে নিয়েও আইনজীবী জিল্লুর রহমানের সন্দেহ হলে তিনি তার বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন নম্বরটি জানতে চান। চিকিৎসক তা না দেখিয়ে উল্টো উত্তেজিত হয়ে কথা বলেন। এরপর আইনজীবী জিল্লুর রহমান হাসপাতালসহ এর সাথে সংশ্লিষ্টদের বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শনের জন্য আইনী নোটিশ পাঠান।

নোটিশ প্রাপ্তির কথা নিশ্চিত করে ডা. মিফতাহুল হোসেন চৌধুরী (৩০ অক্টোবর) বিকেলে বলেন, ‘আইনজীবীর নোটিশটি দেরিতে পেয়েছি। একজন ব্যারিস্টারের মাধ্যমে এর জবাব পাঠাচ্ছি। রোগীর চিকিৎসা সঠিক হয়েছে। এতে কোনো গাফিলতি ছিল না।’

নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবী জিল্লুর রহমান (১ নভেম্বর) বিকেলে বলেন, ‘মাকে নিয়ে যাওয়ার পর যারা পরীক্ষা করেছেন তারা সকলেই স্থানীয় চশমা দোকানী। কেউই চিকিৎসক বা প্যাথলজিস্ট নন। চিকিৎসক ও তাদের কথায় মুগ্ধ হয়ে মায়ের অপারেশন করাই। কিন্তু নির্ধারিত সময় গেলেও দৃষ্টি শক্তি ফিরছে না দেখে বারবার চিকিৎসকের কাছে যাই। তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন। দেড়মাস পার হলেও মায়ের চোখের দৃষ্টি শক্তি না ফেরায় আমি চিন্তায় পড়ে যাই। তাদের চিকিৎসা নিয়ে আমার সন্দেহ হয়। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে দেখি নিবন্ধন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি দুই বছর থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এর সাথে সংশ্লিষ্টদের অনেকেরই সনদ নেই। এই বিষয়ে চিকিৎসকে আইনী নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু নোটিশের জবাব দেওয়ার সময় অতিবাহিত হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।’

0Shares