জাতীয় চার নেতা হত্যার নেপথ্য কুশীলবরাও ধরা পড়বে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০১৯

জাতীয় চার নেতা হত্যার নেপথ্য কুশীলবরাও ধরা পড়বে: প্রধানমন্ত্রী

ডায়ালসিলেট ডেস্ক:জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পেছনে থাকা কুশীলবরাও একদিন ধরা পড়বে এবং বিচার হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হবে এবং ষড়যন্ত্রকারীরা ধরা পড়বে। গতকাল জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। খন্দকার মোশ্‌তাকের নির্দেশে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়
উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্ত্র নিয়ে ঢোকার সময় জেল কর্তৃপক্ষ তাদের বাধা দেয়। কিন্তু তারা আলোচনার কথা বলে অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল। খুনি, বেইমান, মোনাফিক মোশতাক গণভবন থেকে টেলিফোনে সেই নির্দেশ দিয়েছিলো। বলা হয়েছিলো, যেভাবে ঢুকতে চায়, সেভাবেই যেন ঢুকতে দেয়া হয়। পরে শুনেছি কিভাবে তারা জেলে ঢুকে পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
চারজন নেতাকে একসঙ্গে হত্যা করে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এই আলোচন সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ই আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল তখন অনেকে ভেবেছে পরিবারকে নিঃশেষ করার জন্যই এ হত্যাকাণ্ড।

কিন্তু ৩রা নভেম্বর যখন জেলখানায় চার নেতাকে হত্যা করা হলো তখন বাংলার মানুষ পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছিল এটা স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তির কাজ। তিনি বলেন, যখনই মোশতাকের পতন অনিবার্য হয়ে পড়লো তখন ওই খুনিদের প্রথমে প্লেনে করে ব্যাংককে পাঠানো হয়। পরে সেখানে বসে ভিসা পাসপোর্ট প্রসেসিং করে, তারা কোন দেশে যাবে সেটাও ঠিক করে দেয়া হয়। এর সঙ্গে কারা জড়িত সবকিছু ইতিহাসে আছে। বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী যে ঘটনা ঘটিয়েছে ২০০১ সালে সে ঘটনা আবারও হয়েছিল। দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মানুষের ওপর অত্যাচার হয়েছে। নৌকায় ভোট দেয়ায় মানুষকে অত্যাচার করেছে। ৬৩ জেলায় বোমা হামলা হয়েছে। সারা বাংলাদেশে বোমা হামলা হলেও শুধু মুন্সীগঞ্জ জেলায় বোমা হামলা হয়নি। কেন হয়নি? এটা চিন্তার বিষয়। এমনকি গোপালগঞ্জেও বোমা হামলা হয়েছে। আমাদের অনেক নেতাদের ওপর তখন হামলা হয়েছিলো। যেদিন বোমা হামলা হয় তখন আমি টুঙ্গিপাড়ায় ছিলাম। সারাদেশ থেকে ফোন পেয়ে ঢাকায় আসার চিন্তা করি। ৩টার দিকে রওনা দেয়ার কথা থাকলেও ১২টার দিকে রওনা দেই।

মুন্সীগঞ্জ দিয়ে যখন আমি আসি তখন আমার মনে হচ্ছিলো আমার জন্য মনে হয় ওরা অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু আমি আগে চলে আসায় সেটা মনে হয় সম্ভব হয়নি। এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছিলো তাদের অপকর্মের ফসল হলো জরুরি সরকার। জনগণ কিন্তু ততদিনে বিএনপি জামায়াতের সমস্ত অপকর্ম জেনে গেছে। সেই কারণে ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিলো। কিন্তু এটা বোধ হয় অনেকের মনেই থাকে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির অবরোধ এখনও বহাল, তারা অবরোধ এখনও উঠায়নি। হরতাল দিয়েছে, অগ্নি সংযোগ করেছে, বাসে আগুন দিয়েছে, লঞ্চে আগুন দিয়েছে। এসব হামলায় অনেক মানুষ মারা গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য অনেকে মায়াকান্না করে। আমরা যারা ৭৫ সাল থেকে স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আছি আমাদের জন্য কি মায়া লাগে না। তারাতো খুনি। খুনির ছেলে খুনি। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশের মানুষ স্বাধীনতা হারিয়েছিল। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছে বলেই দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ সব ব্যবস্থা আমরা করছি।

২০০৮-১৯ পর্যন্ত মানুষ সত্যিকারের স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। ৪১ সালে এ দেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে সে লক্ষ্যে কাজ করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, টানা আওয়ামী লীগের শাসনের মধ্য দিয়ে দেশ এখন স্বাধীনতার সুফল পাচ্ছে। দীর্ঘ সময় দেশের সেবা করতে পেরেছি বলে দেশে উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশে যেন আর খুনিদের রাজত্ব না হয়। যারা খুনি, সন্ত্রাসী, মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী তাদের হাতে যেন ক্ষমতা না যায়। দেশ উন্নয়নের যে গতিতে চলছে সে গতি যেন অব্যাহত থাকে। জনগণকে সে খেয়াল রাখতে হবে। সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, আবদুল মতিন খসরু, সাহারা খাতুন, কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শিক্ষাবিদ আনিসুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

0Shares