প্রকাশিত: ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
ডায়ালসিলেট ডেস্ক:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যাদের কারণে পিয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে বা দাম বেড়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পিয়াজ বিমানে উঠে গেছে। কার্গো বিমান ভাড়া করে পিয়াজ আনা হচ্ছে। কাল-পরশু পিয়াজ এলে দাম কমে যাবে। কাজেই আর চিন্তা নেই। একইসঙ্গে তিনি বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে সেই টাকায় ফুটানি করলে দেশের মানুষ বরদাশত করবে না। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সম্মেলনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।প্রধান অতিথিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নির্মল রঞ্জন গুহ এবং গাজী মেজবাউল হক সাচ্চু। এরপর পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এসময় তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। পরিবেশন করা হয় দলীয় সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠান। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি নির্মল গুহ এর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাংগঠনিক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পিয়াজ প্রসঙ্গে বলেন, পিয়াজের দাম এখন একটা সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এটা সত্য যে বিভিন্ন দেশে পেয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু আমি জানি না আমাদের দেশে কেন অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারও চক্রান্ত আছে কি না, তা খুঁজে দেখতে চাই। আবহাওয়ার কারণে পণ্যের উৎপাদন বাড়তে বা কমতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ আছেন, যারা পিয়াজ মজুত করে দাম বাড়ানোর মাধ্যমে দ্রুত টাকা উপার্জন করতে চান। কিন্তু তাদের মাথায় রাখা উচিত পিয়াজ বেশি দিন মজুত রাখা যায় না, এগুলো পচে যায়। শেখ হাসিনা বলেন, ভারতেও পেয়াজের দাম এখন খুব বেশি এবং বর্তমানে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সে দেশে এমন একটি রাজ্য রয়েছে, যেখান থেকে পিয়াজ রপ্তানির অনুমতি নেই…সেই রাজ্যে পিয়াজের দাম কম। বাংলাদেশের মানুষ যখন ভালো থাকে তখন একটা শ্রেণি ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। তারা কোনো না কোনোভাবে একটি ইস্যু তৈরি করে। এদেশের মানুষ ভালো থাকুক সুখে-শান্তিতে থাকুক তা একটা শ্রেণি চায় না।
মানুষ যখনই সুখের মুখ দেখতে চায় তখন এই শ্রেণির লোকেরা খুব মনঃকষ্টে ভোগে। যারা এ ধরনের অপকর্ম করে তাদের বিষয়টিও এদেশের জনগণ দেখবে। তিনি বলেন, এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমরা নানাবিধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। শুধু শহর নয়, গ্রামের মানুষও যেন শহরের মতো সুবিধা পায় আমরা সে কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আজ যখন একজন প্রত্যন্ত অঞ্চলে গৃহিণী বলে আমরা এখন আর চুলায় ফুক দিয়ে রান্না করি না। এখন আমরা রাইস কুকারে ভাত রান্না করি। আরেকজন প্রত্যন্ত গ্রামের বোন যখন বলে যে-সে গ্রামে বিউটি পার্লার দিয়েছে এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে সে সংসার পরিচালনা করছে, তখন বোঝা যায় যে, গ্রামের মানুষের আর্থিক উন্নতি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, একজন রাজনীতিকের জীবনে সে নিজে কতটুকু লাভবান হলো সেটা বড় কথা নয়। মানুষকে কতটুকু দিতে পারলো সেটাই হলো বড় কথা। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন এই বাংলাদেশকে নিয়ে, সেই সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার সুফল এদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ দারিদ্র্যমুক্ত হলে যারা দরিদ্র বিক্রি করে চলতো, তাদের আঁতে ঘা লাগে। তাই তারা বারবার বাগড়া দেয়ার চেষ্টা করে এবং অপপ্রচার চালায়। কেউ যেন এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না-আমি সেটাই বলবো। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে জনগণের যে সেবা দিচ্ছে এই কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এই গতি আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই দেশ থেকে মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি দূর করতে চাই। এর বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে,সেই অভিযান আমরা অব্যাহত রাখব। কারণ বাংলাদেশের মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আর একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই উন্নতি সম্ভব। সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আমরা চাই। কেন দুর্নীতি করে, চুরি করে টাকা বানাতে হবে? আর ওই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে, সেটা দিয়ে আবার বিলাসবহুল জীবন যাপন করা, ওই টাকা দিয়ে ফুটানি করা। অসৎ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার থেকে সৎ পথে নুন ভাত খাওয়া অনেক মর্যাদার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমাদের বিরুদ্ধে অনেক তদন্ত করে। এরপরে আবার কেয়ারটেকার এসে তদন্ত শুরু করে। এর মধ্যে আবার আমেরিকায় জয়কে কিডন্যাপ করার পরিকল্পনা হয়।বিএনপি দুর্নীতি করে এত টাকা কামিয়েছিল যে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র একজন অফিসারকে ভাড়া করে ফেলে, তাকে টাকা দিয়ে কিনে ফেলে। আমেরিকা সেই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে বিএনপির খালেদা জিয়া, তার দুই পুত্রের দুর্নীতির তথ্য জানতে পারে। তাদেরই (এফবিআই) রিপোর্ট, একমাত্র প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) এবং তার ছেলে ও বোন, আমাদের বিষয়ে কোথাও কোনো রকম কমিশন খাওয়া, চাঁদাবাজি বা দুর্নীতির কোনো দৃষ্টান্ত তারা পায়নি। যে অফিসারকে বিএনপি হায়ার করেছিল, এফবিআই তার বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে বের হয়ে আসে কোন কোন বিএনপি নেতা তাকে টাকা দিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট হত্যা করে থেমে যায়নি। তাদের চক্রান্ত অনেক দূর পর্যন্ত। তারা খুঁজতে গেল আমাদের দুর্নীতি, ধরা পড়লো নিজেরাই। আর যখন তারা জয়কে কিডন্যাপ করার পরিকল্পনা নিল, সেখানেও ধরা পড়লো। তাদের ওই দুই নেতার নাম চলে আসলো জাজমেন্টে। এই চক্রান্তকারী তারাই যারা খুনিদেরকে মদত দিতে পারে, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারে, পুরস্কৃত করতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদেরকে যারা কাছে টেনে নিয়ে মন্ত্রী বানায়, যারা জনগণের ভোট চুরি করে জাতির পিতার খুনিদেরকে এমপি বানায়। আজকে তারা অনেক কথা বলে। তাদের সময়েই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, গ্রেনেড হামলা হয়েছে। তারাই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড শুরু করে। সেই জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া পর্যন্ত। তাদের এই স্বভাব কোনোদিন যাবে না। ওই খুনি, দুর্নীতিবাজরা যেন আর কোনোদিন এই দেশে ক্ষমতায় আসতে না পারে, বাংলাদেশের জনগণকে সে ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। এরা আসা মানেই মানুষের দুর্ভোগ, এরা ক্ষমতায় থাকা মানেই দেশকে একেবারে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া।শেখ হাসিনা নির্বাচনভিত্তিক রাজনীতি করেন না: এদিকে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার ভিশন শুধু পরবর্তী নির্বাচন নয়। তার চিন্তা ভবিষ্যৎ নিয়ে। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। তিনি নির্বাচনভিত্তিক রাজনীতি করেন না। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আজকে গর্ব করে বলতে পারি, গত ৪৪ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাহসী নেতার নাম শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত বিদায়ের পর আমরা আজ একথা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, শেখ হাসিনার মতো সৎ রাজনীতিক ও রাষ্ট্রনায়ক এদেশে আগে আসেনি। আমরা গর্ব করে বলতে পারি, গত ৪৪ বছরে সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা। দেশের সবচেয়ে সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো নেত্রী যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন,তা যেকোনও মূল্যে সফল করতে হবে। দুর্নীতিবাজ, মাদকসেবী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও ভূমিদস্যুদের না বলুন। এটাই হচ্ছে শেখ হাসিনার শুদ্ধি অর্জন। সৎ সাহস আছে বলেই বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজের ঘর থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। আমরা তাকে স্যালুট করি।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech