বড়লেখায় অটোরিকশা চালককে হত্যার অভিযোগ, গ্রেফতার-১

প্রকাশিত: ৮:৩৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০১৯

বড়লেখায় অটোরিকশা চালককে হত্যার অভিযোগ, গ্রেফতার-১

ডায়ালসিলেট ডেস্ক:: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পূর্ববিরোধের জের ধরে অটোরিকশাচালক মুজিবুর রহমানকে (৩৫) নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার চুয়ারকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মুজিবুর রহমান উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির বড়পুকুরিয়া গ্রামের জুনাব আলীর ছেলে। মুজিবর উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর মধ্যবাজার অটোরিকশা স্ট্যান্ডের সদস্য।এ ঘটনায় (১৬ নভেম্বর) শনিবার মুজিবুর রহমানের বাবা জুনাব আলী বাদি হয়ে তিনজনকে আসামি করে বড়লেখা থানায় একটি মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন-উজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চুয়ারকান্দি গ্রামের মৃত হারিছ আলীর ছেলে সাহাব উদ্দিন (৩৫) ও তাঁর প্রতিবেশী মকবুল আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম (২৮) এবং ভাই ইসলাম উদ্দিনের স্ত্রী সুমা বেগম (২১)। মামলার পরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে।

মামলার এজাহার ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চুয়ারকান্দি গ্রামের সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে অটোরিকশা চালক মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল। গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে উপজেলার চুয়ারকান্দি গ্রামে খালাতো বোন রুশনা বেগমের বাড়িতে বেড়াতে যান মুজিবুর। সেখানে রাতের খাবার খেয়ে রাত ১২টার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়না দেন মুজিবুর। কিন্তু বাড়িতে আর ফেরেননি। রাত তিনটার দিকে মুজিবুর রহমানের বাবা জুনাব আলীকে ফোন করে তাদের ওয়ার্ডের মেম্বার কবির আহমদ জানান তাঁর ছেলে মুজিবুরকে চুয়ারকান্দি গ্রামের নজরুল ইসলামে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে।খবর পেয়ে জুনাব আলী সেখানে গিয়ে দেখেন তাঁর ছেলে সাহাব উদ্দিনের ভাইয়ের স্ত্রী সুমা বেগমের বসতঘরে মুমূর্ষ অবস্থায় পড়ে আছে। এসময় তিনি মুজিবুরের শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন ও নাক দিয়ে রক্ত বের হতে দেখেন। জুনাব আলী তাঁর ছেলেকে মারধরের কারণ জানতে চাইলে বিবাদীরা কোনো উত্তর দেননি। মুমূর্ষ অবস্থায় মুজিবুরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে বিবাদী সাহাব উদ্দিন ও নজরুল ইসলাম বাঁধা দিয়ে বলেন, তাঁকে নিতে হলে স্ট্যাম্পে বন্ডসই দিয়ে নিতে হবে। এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুক উদ্দিনসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। অনেক চেষ্টা করেও বিবাদীদের কাছ থেকে ছেলেকে উদ্ধার করতে পারেননি জুনাব আলী।

পরে ভোর ৬টার দিকে স্থানীয় এলাকার লোকজনের অনুরোধে মুজিবুরকে নিয়ে যেতে বলে বিবাদীরা। সেখান থেকে গুরুতর অবস্থায় মুজিবুরকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৮টায় হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক মুজিবুরকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

অটোরিকশাচালক মুজিবুর রহমানের বাবা জুনাব আলী রোববার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ঘটনার রাতে আমার ছেলে মুজিবুর তাঁর খালাতো বোনের বাড়ি চুয়ারকান্দি গ্রামে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে রাতে খাবার খেয়ে সে বাড়ি ফিরছিল। রাত তিনটার দিকে আমাদের ওয়ার্ডের মেম্বার আমাকে ফোন করে বলেন আমার ছেলে চুয়ারকান্দি গ্রামে নজরুল ইসলামের বাড়ি আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখি, আমার ছেলে মুমূর্ষ অবস্থায় পড়ে আছে। তার শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘতের চিহ্ন। নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আসিমার আমার ছেলেকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। সময়মতো তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে হয়তো সে বেঁচে যেতো। আমি আমার ছেলের খুনিদের বিচার চাই।উপজেলা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন রোববার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, মুজিবর উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর মধ্যবাজার অটোরিকশা স্ট্যান্ডের সদস্য ছিলেন। তাকে নিমর্মভাবে খুন করা হয়েছে। আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।এব্যাপারে বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক রোববার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, অটোরিকশাচালক মুজিবুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। নজরুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

0Shares