প্রকাশিত: ৯:২০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০২০
স্পোটর্স ডেস্ক:বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সিলেট পর্ব শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি)। এখানে তিন দিনে অনুষ্ঠিত হবে মোট ছয়টি ম্যাচ। তবে অন্যান্যবারের মতো এবারের বিপিএল নিয়ে আগ্রহ নেই দর্শকদের। বুধবার (১ জানুয়ারি) সিলেটে ক্রিকেট বিক্রির বুথগুলো ছিল ফাঁকা। তবে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ম্যাচের দিন ঠিকই সিলেটের মানুষ মাঠে বসে খেলা উপভোগ করবেন।
দুটি পাতা আর একটি কুঁড়ির দেশ হিসেবেই পরিচিত সিলেট। এছাড়াও প্রাকৃতিক কন্যা, দ্বিতীয় লন্ডন কিংবা পুণ্যভূমি হিসেবেও সিলেটের আলাদা ডাকনাম আছে। তবে সব চাপিয়ে সিলেটের বড় পরিচয় সিলেটের মানুষ অতিথি পরায়ণ এবং অসাম্প্রদায়িক। এ কারণে সিলেটে উৎসব মানেই সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ। কথাটি বাদ যায় না খেলাধুলার বেলাও। কারণ ফুটবলে যখন দর্শক টানতে পারছেনা তখনও সিলেটের মানুষ দেখিয়েছে ফুটবলের প্রতি প্রেম। দিয়েছে হুদয় নিংড়ানো ভালোবাসা। ২০১৪ সালের ২৯ আগস্ট সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-নেপাল অনূর্ধ্ব ২৩ প্রথম আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল। এদিন দেশের মানুষ দেখেছিল অন্য এক সিলেটকে। ম্যাচের দিন গ্যালারি তো বটেই, ডাগ আউট, টাচ লাইন পর্যন্ত দর্শকে ঠাসা। এতে খেলোয়াড়দের থ্রো-ইন, কর্নার কিক নিতে বেশ কষ্ট হয়েছে বেশ। এতো উন্মাদনার পরও এদিন সিলেটের মানুষকে পরাজয় উপহার দেয় বাংলাদেশ ফুটবল টিম।
সেসময় ফুটবলের কর্তাব্যক্তিরা ঢাকার মাঠ থেকে ফুটবলকে ছড়িয়ে দেবার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। এরপর থেকেই নিয়মিত সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বয়স ভিত্তিক দল, জাতীয় দলের খেলা ও লীগ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দর্শকরাও প্রতিদিন মাঠে এসে উৎসাহ দিচ্ছেন। শুধুই কি ফুটবলে এমন উন্মাদনা। ক্রিকেটেও কি নয়? সবুজ পাহাড় টিলা আর নয়নাভিরাম চা বাগানের মনোরম পরিবেশে একমাত্র গ্রিন গ্যালারির সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাড়ে ১৮ হাজার দর্শক একসাথে বসে খেলা উপভোগ করতে পারেন। ২০০৭ সালে স্টেডিয়ামটি নির্মিত হলেও ২০১৪ সালে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের খেলার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে অভিষিক্ত হয় মাঠটি। এরপর ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, ২০১৭ বিপিএলের ছয়টি এবং ২০১৮ সালের বিপিএলের আটটি খেলা, বাংলাদেশ-শ্রীলংকার একটি ওয়ানডে এবং বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি ম্যাচও এ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া সবকটি খেলায়ই দর্শকরা স্টেডিয়ামের গ্যালারি মাতিয়েছেন।
বিপিএলের গত আসরের সিলেট পর্ব নিয়ে তো রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ড হয়েছে সিলেটে। প্রথমেই সিলেটে টিকিট ছিল ‘সোনার হরিণ’। কারণ সেবার অনেকেই আগের রাত থেকেই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের বুথে হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন; যার দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটারেরও বেশি ছিল। তবে চাহিদার তুলনায় টিকিটের সংখ্যা কম থাকায় ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই হাহাকার শুরু হয়েছিল। অনেকেই দীর্ঘসময় লাইনে দাড়িয়ে টিকেট না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়ছিলেন। সেই আক্ষেপ গোছাতে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। এরপর স্থানীয় পর্যায়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলেছিল বিপিএল।
অথচ এবার যেন শীতের মতোই নিরুত্তাপ বঙ্গবন্ধু বিপিএলের সিলেট পর্ব। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আধুনিকতার উৎকর্ষের দারুণ মেলবন্ধনের সিলেট স্টেডিয়াম যেন শীতের কামড়েই কাবু। একই অবস্থা সিলেট নগরেও। কারণ নগরেও যে নেই বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ব্যানার ফেস্টুন। চোখে পড়ার মতো ছিল না কোন প্রচার-প্রচারণাও। গেল বছর সিলেট সির্ক্সাস বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণা চালালেও এবার বিবিএল নিয়ে কোন প্রচারণাই নেই সিলেটে। তবে শুধু প্রচার প্রচারণায় নয়, ভাটা আছে সিলেট থান্ডার্সের খেলায়ও। এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে ৭ পরাজয়ের বিপরীতে মাত্র এক জয়। নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে আন্দ্রে ফ্রেচারের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে একমাত্র জয় পায় দলটি। এরপর আর জয়ের দেখা পায়নি সিলেট থান্ডার্স। সেই প্রভাবও পড়েছে দর্শকদের মাঝেও।
তবে উন্মাদনা যে একেবারে নেই, তা অবশ্য নয়। টিম হোটেলে অনেক ভক্তের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম ও জেলা স্টেডিয়ামের টিকিট বুথ থেকে অনেককেই টিকেট সংগ্রহ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা আসা করছেন, খেলার দিন ঠিকই দর্শকে ভরপুর থাকবে সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
বিপিএলের সিলেট পর্বের মিডিয়া ম্যানেজার ফরহাদ কোরেশী বলেন, বছরের শেষ ও শুরুর সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তেমন পড়াশুনার চাপ না থাকায় অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে গেছেন। আর এবছর শীত একটু বেশি পড়ায় সিলেটে দর্শক কম হতে পারে। শুধু সিলেটে নয়, এবার ঢাকা-চট্টগ্রামেও দর্শকের উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল। এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, এবারের বিপিএলে ভালো বিদেশি খেলোয়াড়ের সংখ্যা কম।
সিলেটে বিপিএল নিয়ে প্রচার প্রচারণা কম হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে প্রচার প্রচারণার তেমন কোন ঘাটতি রাখিনি। আমরা সিলেট শহরের প্রধান প্রধান সড়কের পাঁচটি মোড়ে পাঁচটি বড় বড় বিলবোর্ড লাগিয়েছি। স্থানীয় টিভি চ্যানেল ও খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। আমরা আশা করছি দর্শক মাঠে এসে খেলা উপভোগ করবেন।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech