ইউরোপকে করোনাভাইরাসের মহামারি কেন্দ্রস্থল ঘোষণা

প্রকাশিত: ৬:৪২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::   ইউরোপকে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারির কেন্দ্রস্থল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল (শুক্রবার) মহামারির কেন্দ্রস্থল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) ইউরোপের দেশগুলোতে প্রতিদিন এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ও মৃত্যুহার বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে। এর আগে গত (বুধবার)সংস্থাটি  করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে।

এদিকে করোনাভাইরাসে স্পেনে অন্তত আট বাংলাদেশি সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সিলেটের তিনজন, ঢাকার এক দম্পতি এবং যশোর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুজন। অপরজনের ঠিকানা জানা যায়নি। বর্তমানে আটজনই হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এর আগে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সিঙ্গাপুরে পাঁচজন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনজন করোনা আক্রান্ত হন।

গতকাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্পেনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক হাজার ১৮৮ জন করোনা আক্রান্তের ঘটনাও ঘটেছে এবং মারা গেছে ৩৬ জন। এতে করে দেশটিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৮ জন্ এবং আক্রান্তের হার বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার ৫২২ জন। এর মধ্যে ১৯৩ জন সুস্থ হয়েছে।

এ পরিস্থিতির কারণে গতকাল স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন বলে জানিয়েছে চীনা টেলিভিশন সিজিটিএন।করোনাভাইরাসে বৈশ্বিক মৃতের সংখ্যা গতকাল পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে।

বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা নাগাদ মোট মৃত্যু পাঁচ হাজার ১২২-এ পৌঁছেছে। গতকাল সর্বোচ্চ মৃত্যু ও সংক্রমণ হয়েছে ইরানে। মারা গেছে ৮৫ জন আর সংক্রমিত হয়েছে এক হাজার ২৮৯ জন।

মাদ্রিদে বাংলাদেশের মিশন উপপ্রধান এম হারুন আল রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কয়েকজন নেতার কাছ থেকে আমরা আট বাংলাদেশির করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর জেনেছি। সংবাদপত্রেও প্রতিবেদন দেখেছি। আমরা এ বিষয়ে আরো জানার চেষ্টা করছি। তবে বলা হয়েছে, সংক্রমিত ব্যক্তিরা পরিচয় জানাতে চান না। এ কারণে আমাদেরকে কারো নাম জানানো হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমিত বা ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে তথ্য জানতে চেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য তারা ইতিমধ্যে একটি হটলাইন (+৩৪৬৭১১৯৬৯৯২) খুলেছেন। তবে হটলাইনে এখন পর্যন্ত তারা কোনো তথ্য পাননি।’

স্পেনে বাংলাদেশি মানবাধিকার সংস্থা ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি ফজলে এলাহী জানান, দেশটিতে আক্রান্ত বাংলাদেশিদের মধ্যে যে তিনজনের বাড়ি সিলেটে, তাঁদের একজনের বয়স ৪৫, আরেকজনের ৪৩ এবং অপরজন ৩৫ বছর বয়সী নারী। তাঁরা দেশটির রাজধানী মাদ্রিদের বাঙালি অধ্যুষিত লাভাপিয়েসে থাকেন।

আক্রান্ত ঢাকার দুজন সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী। ওই দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। আক্রান্ত স্বামীর বয়স ৩৭ ও স্ত্রীর ২৬। তাঁদের দুই মাস বয়সী শিশুসন্তানকে হাসপাতাল হেফাজতে রাখা হয়েছে। পরিবারটি মাদ্রিদের অদূরে কারাবানচলে থাকে।

যশোরের একজন ছাড়াও করোনায় আক্রান্ত অন্য দুজন তরুণ। এর মধ্যে একজনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। অন্যজনের ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি। তাঁরা মাদ্রিদে দীর্ঘদিন থেকে বসবাসরত।

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ইতিমধ্যে মাদ্রিদ, বার্সেলোনাসহ বেশ কয়েকটি প্রদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অফিস আদালত বন্ধ করা হয়েছে। এমনকি বাঙালি অধ্যুষিত লাভাপিয়েসের বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশ মসজিদে গতকাল জুমার নামাজ হয়নি। যানবাহন ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দেশটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালুনিয়ার চারটি শহর অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ইগুয়ালাডা, ওডেনা, মারগারিদা ও মন্তবুই শহরের কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না।

দুই সপ্তাহ ধরে ভাইরাসটি চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বুধবার করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডাব্লিউএইচও। গতকাল ডাব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রোস আধানম গ্রেব্রিয়েসিস এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, Õইউরোপ এখন মহামারির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাওয়া একটি করুণ মাইলফলক।’

ইরানে গতকাল সর্বোচ্চ মৃত্যু ও সংক্রমণ হয়েছে। মারা গেছে ৮৫ জন এবং সংক্রমিত হয়েছে এক হাজার ২৮৯ জন। সংক্রমণ সংখ্যার বিচারে গতকাল তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে ছিল জার্মানি। সেখানে এক দিনে আক্রান্ত হয়েছে ৩৭২ জন। মারা গেছে একজন। এর পরের অবস্থানে থাকা নেদারল্যান্ডসে গতকাল ১৯০ জন আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে পাঁচজন। দক্ষিণ কোরিয়ায় এক দিনে আক্রান্ত হয়েছে ১১০ জন, মারা গেছে পাঁচজন। স্কটল্যান্ডে মারা গেছে একজন।

ভারতের দিল্লিতে গতকাল এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কর্ণাটকে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এ নিয়ে প্রতিবেশী দেশটিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দুজনে দাঁড়াল।

গতকাল নতুন দেশ হিসেবে আক্রান্তের কথা জানিয়েছে কাজাখস্তান, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, সুদান ও গিনি। এতে করে আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৫-এ। কাজাখস্তানের আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি জার্মানি থেকে দেশে ফেরেন। তাঁকে দেশটির বৃহৎ শহর আলমাটির বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে গতকাল কেনিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুতাহি কাগয়ে জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির রাজধানী নাইরোবিতে ২৭ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে করোনা মিলেছে। সপ্তাহখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডন হয়ে তিনি দেশে ফেরেন। ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী লিয়া কেবেদে গতকাল জানান, ৪৮ বছর বয়সী এক জাপানি সম্প্রতি বুরকিনা ফাসো থেকে ইথিওপিয়ায় আসেন। তাঁর শরীরে করোনার অস্তিত্ব মিলেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নেপাল দেশটির সব আবর্তে এভারেস্টে আরোহণ বন্ধ করে দিয়েছে এবং পর্যটক ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। দেশটির সংস্কৃতি, পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচলবিষয়ক মন্ত্রী যোগেশ ভট্টরাই বলেছেন, সরকার এভারেস্টে বসন্তের সব অভিযান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামনের দিনগুলোয় বিশ্বের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ