যুক্তরাষ্ট্রে করোনা চিকিৎসায় প্রথম ওষুধ অনুমোদন করলো হোয়াইট হাউজ

প্রকাশিত: ৯:৩৯ অপরাহ্ণ, মে ২, ২০২০

ডায়ালসিলেট ডেস্ক::   যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) করোনা চিকিৎসায় জরুরি ভিত্তিতে রেমডেসিভির ওষুধকে অনুমোদন দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দিয়েছেন। করোনা মোকাবিলায় এই ওযুধের ব্যবহারকে ‘খুব আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। রেমডেসিভির তৈরির পিছনে রয়েছে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা জিলিড সায়েন্সেস। জিলিডের সিইও ড্যানিয়েল ও’ডে বলেছেন, “হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের উপর প্রথম ব্যবহার করা হবে এটি।” এই ওষুধের প্রথম ১৫ লক্ষ ডোজ বিনামূল্যে দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিল জিলিড।

এটাই হবে এই মহামারি সৃষ্টিকারী ভাইরাসের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় প্রথম কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ও ওষুধ।ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, এই সোমবার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালে বিতরণ করা হবে এই ওষুধ। এই ওষুধটি মূলত বানানো হয়েছিল ইবোলা চিকিৎসার জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এ ওষুধ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তারা মনে করেন, এই ওষুধটি করোনা রোগের চিকিৎসায় ফলপ্রসূ হতে পারে। এর দুই দিন পর এফডিএ এই জরুরি অনুমোদন দিল। বুধবার হোয়াইট হাউজের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, এ ওষুধ প্রয়োগ করার ফলে ৩০ শতাংশ রোগী খুব দ্রুত সেরে উঠছেন। রেমডিসিভির প্রয়োগে রোগীর সুস্থ হওয়ার সময় ১৫ দিন থেকে ১১ দিনে নেমে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি এস ফাউসি এ ওষুধটির ব্যাপারে বলেছেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পাওয়া তথ্য দেখা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, করোনা থেকে দ্রুত সেরে ওঠার ক্ষেত্রে রেমডিসিভির কার্যকর।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়া নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোন ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। তবে জাপানের অ্যাভিগানসহ কিছু ওষুধ কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় কার্যকর বলে নানা সময়ে জানা গেছে। এসব ওষুধ এখনও ট্রায়ালের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। তবে এবার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলতি অবস্থায় এই প্রথম কোন ওষুধ করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অনুমোদিত হল।

করোনা মোকাবিলায় গত কয়েক দিনে বার বার উঠে এসেছে ‘রেমডেসিভির’ ওযুধের নাম। করোনা আক্রান্তদের উপর জরুরিকালীন ভিত্তিতে এ বার এই ওযুধ ব্যবহারের ছাড়পত্র দিল হোয়াইট হাউস। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এ কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দিন কয়েক আগে চিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই ওষুধ ব্যর্থ বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু তার পরেই শীর্ষস্থানীয় মার্কিন মহামারি বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফসি দাবি করেন, এই অ্যান্টিভাইরাল ওযুধটি করোনা-চিকিৎসায় কাজ দিচ্ছে। তার পর সারা বিশ্বের চিকিৎসক মহলে আলোচনা শুরু হয় রেমডেসিভিরকে নিয়ে।

করোনা থেকে মুক্তি কী ভাবে মিলবে তা নিয়ে যখন সারা বিশ্ব কমবেশি দিশেহারা, তখন ফসি দাবি করেন, ‘‘আমরা বহু পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছি, করোনা আক্রান্ত রোগীদের সারিয়ে তুলতে রেমডেসিভির প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। প্রায় ১১ দিনে সুস্থ হয়ে উঠছেন অনেকে।’’ এই ওষুধ প্রয়োগে রোগীদের কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার শিকার হতে হয়নি বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। এই দাবিই করোনা প্রতিরোধে আশার আলো দেখায়।

এর পরই হোয়াইট হাউসের তরফে মিলল রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমতি। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যা়ডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-র তরফে জানানো হয়েছে, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর, যাদের রক্তে অক্সিজেনের হার ব্যাপক ভাবে কমে গিয়েছে, যাদের ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে তাদের উপরেই প্রথম প্রয়োগ করা হবে এই ওষুধ।

ইতিমধ্যেই বিশ্বে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন প্রায় ৩৩ লক্ষ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ। রেমডেসিভির ব্যবহার এই মৃত্যুমিছিলে রাশ টানতে পারে কি না সেটাই দেখার।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ