ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপদ বিশ্ব গড়তে বিশ্ব সম্প্রদায়কে উদ্যোগী হতে হবে  – পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী

প্রকাশিত: ৪:৫১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২১

ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপদ বিশ্ব গড়তে বিশ্ব  সম্প্রদায়কে উদ্যোগী হতে হবে  – পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী

ডায়ালসিলেট ডেস্ক ::

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশের পরিবেশের দৃশ্যমান উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে যা বিশ্ব দরবারের স্বীকৃতি পেয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে বিশ্ববাসীকে জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও গ্রিন হাউস নির্গমন কমিয়ে আনতে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বিশ্ব গড়তে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এখনই উদ্যোগী হতে হবে।

বুধবার (২৮ এপ্রিল) ধরিত্রী দিবস ২০২১ উপলক্ষে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত ‘রোড টু গ্লাসগোঃ আমাদের পৃথিবীর পুনরুদ্ধার ও জলবায়ু সুরক্ষা’ শিরোনামের ভার্চুয়াল সংলাপে পরিবেশ মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এর সভাপতিত্বে এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ অনুবিভাগ) মো. মনিরুজ্জামান, একশন এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, নারী ও মানবাধিকার কর্মী শিপা হাফিজা, ব্রিটিশ কাউন্সিলের আইবিপি ম্যানেজার প্রকাশ মোঃ আবুল বাশার প্রমুখ।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, এবারের বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উদযাপন তাৎপর্যপূর্ণ। এর কারণ করোনা মহামারির রূঢ় বাস্তবতা আমাদের শিখিয়েছে যে, আমরা যতই অর্থ-সম্পদে বিত্তশালী হই না কেন প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকা যায় না। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মূল উপকরণগুলো আসে প্রকৃতি থেকে। আমরা বুঝতে পেরেছি প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারকে ধ্বংস করে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না। আজ আমরা যখন বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালন করছি, তখন করোনার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আরও বিপর্যয়কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকুলীয় এলাকা এবং উত্তর-পুর্বাঞ্চলের হাওর এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে গেলে আমাদের দেশের ১৭ ভাগ ভুমি পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে প্রায় তিন কোটি মানুষ তাদের আবাসন হারাতে পারে, হারাতে পারে তাদের আজন্মের পরিচিত গ্রাম ও অসংখ্য স্মৃতি। হাওরে ফসলহানীর কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এই দরিদ্র ও নিরীহ মানুষগুলো নিজেরা কোনোভাবেই জলবায়ু-সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকারী উন্নত দেশ সমুহ। তাই এর দায় তাদের নিতে হবে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, একটি দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য ভূখন্ডের অন্তত ২৫ শতাংশ বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন। সামাজিক বনায়নসহ বনায়ন কার্যক্রম ও দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণের ফলে দেশে বর্তমানে মোট বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২.৩৭ শতাংশ। এটিকে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ২৪ শতাংশ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে সরকার। দেশে বর্তমানে বনজ সম্পদের ঘাটতি পূরণ, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বন অধিদফতর ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলে বনায়ন কার্যক্রম, উপকূলীয় বনায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, সামাজিক বনায়ন, বনায়ন কার্যক্রমে নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী‌খলীকুজ্জমান বলেন, তরুণরা অনেক নতুন আইডিয়া নিয়ে আসছে। তাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় কাজে লাগাতে হবে। জলবায়ু ফান্ডের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে অনেক শর্ত দেওয়া হয় যা পূরণ করা সম্ভব হয়না। শর্ত আরও শিথিল ও বাস্তব সম্মত হতে হবে।
নেদারল্যান্ডস এ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ পানি ব্যবস্থাপনায় নেদারল্যান্ডস এর নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনায় এমন কিছু উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, তরুণদের মাঝে অমিত সম্ভাবনা আছে। আমাদের মন্ত্রনালয়ের জনবল সংকট নিরসনে আমরা তরুন সমাজসবী ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগাতে পারি।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের আইবিপি ম্যানেজার প্রকাশ আবুল বাশার বলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘গ্লোবাল লিডারস সামিট’ আমাদের আশান্বিত করে তুলছে। আশাকরি বাংলাদেশ সহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো আন্তর্জাতিক ফান্ড থেকে সহযোগিতা পাবে। যে ফান্ড জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় কাজে লাগবে।
একশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা যা মূলত ধনী দেশগুলোর সৃষ্টি। তাই এর ক্ষতি পোষাতে ধনী দেশগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় তরুনদের শক্তিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।
মানবাধিকার কর্মী শিপা হাফিজা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীরা নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষায় নারীর অবদানেরও কোনো স্বীকৃতি নেই। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহ সকলের কথা ভেবেই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে সোহানুর রহমান পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা এবং ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে তরুনদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কাজে লাগাতে পরামর্শ দেন। অনুষ্ঠানে দেশের অন্ততঃ ত্রিশটি জেলা থেকে দেড় শতাধিক তরুণ যোগ দেয়। তরুণ প্রজন্ম উপস্থিত অতিথিদের কাছে বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরে তা সমাধানে করণীয় সম্পর্কে জানতে চান।
0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ