প্রকাশিত: ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২১
ডায়ালসিলেট ডেস্ক::কোভিড-১৯ মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ এবং দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়াসহ এশিয়ার প্রায় ৮০ কোটি শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো প্রকাশিত এশিয়ায় শিক্ষা খাতের ওপর ‘কোভিড-১৯ এর প্রভাব ও মোকাবিলা কার্যক্রম বিষয়ক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ’ (সিটএন রিপোর্ট) শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে শিশুদের পড়াশোনার ওপর মহামারির অব্যাহত প্রভাব এবং তা মোকাবিলায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারের গৃহীত কর্মসূচি ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু দেশে, যেমন ফিলিপাইনে, মহামারির পুরো সময়ে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হয়, যা এখনো বহাল আছে এবং সে কারণে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের ২ কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থীর সশরীরে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশে গত ১২ই সেপ্টেম্বর স্কুলগুলো পুনরায় খুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত মহামারির পুরোটা সময় স্কুলগুলো বন্ধ ছিল। পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইউনিসেফের পরিচালক মার্কোলুইজি কোরসি এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষা সেবার ব্যাঘাত শিশুদের ওপর, বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা শিশুদের ওপর যে প্রভাব ফেলেছে তা আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। যখন স্কুল বন্ধ থাকে, তখন শিশুরা শেখার ও বেড়ে ওঠার সবচেয়ে বড় সুযোগটি হারায়। পুরো একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপদে বিদ্যালয়গুলো পুনরায় চালু করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। অন্যথায়, পড়াশোনার এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন (সিএএমপিই) পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতি তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দু’জনের কাছে দূরশিক্ষণ সেবা পৌঁছানো যায়নি। বস্তুগত সম্পদ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তার অভাব ছাড়াও এই কঠিন সময়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং অনেক কন্যাশিশুর দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণে উল্লেখযোগ্য আরও যেসব বিষয় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশের অভাব, গৃহস্থালীর কাজ করার চাপ বৃদ্ধি এবং বাড়ির বাইরে কাজ করতে বাধ্য হওয়া।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট বলেন, ১৮ মাস বন্ধ রাখার পর বাংলাদেশে এখন যখন স্কুলগুলো খুলে দেয়া হয়েছে, তখন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ রেখে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিশুদের সাহায্য করার জন্য দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণে আমাদের প্রচেষ্টায় কোনো ঘাটতি রাখা উচিত নয়। শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে বিনিয়োগ করার এখনই সময়।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) হিসাব অনুযায়ী, সংকট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে এশিয়া অঞ্চলে ১ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। যা এই অঞ্চলের ২০২০ সালের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫.৪ শতাংশের সমান। বিদ্যমান তথ্য-প্রমাণ বলছে, একটি সংকটের মুহূর্তে পড়াশোনার ক্ষতি সামাল দিতে শুরুতেই ব্যবস্থা নেয়া হলে তা অনেক সাশ্রয়ী ও কার্যকর হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার পেছনে বিনিয়োগ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিকে সহায়তা করবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক জর্জ লারিয়া-আদজেই বলেছেন, ‘সরকার, অংশীদার এবং বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শুধু সঠিক কৌশল এবং সঠিক মাত্রায় বিনিয়োগ পাওয়ার জন্যই নয়, বরং স্কুল খোলা বা বন্ধ যাই থাকুক না কেন, সব শিশুর জন্য একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে শিক্ষার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে সক্ষম আরও টেকসই, কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিনিয়োগ প্রয়োজন। মহামারি জনিত কারণে স্কুল থেকে শিশুদের, বিশেষ করে মেয়ে শিশু এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের, ঝরেপড়ার বর্ধিত ঝুঁঁকি সাম্প্রতিক দশকগুলোতে স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতিকে উল্টে দিতে পারে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া যদি আগামী নয় বছরে জাতিসংঘের ২০৩০ সালের এজেন্ডার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার শিক্ষা বিষয়ক লক্ষ্য অর্জন করতে চায় তাহলে এ ধরনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা বাজেট গড়ে ১০ শতাংশ বাড়াতে হবে।
ইউনেস্কো ব্যাংককের পরিচালক শিগেরু আয়োগি বলেন, স্কুলে ফিরে আসা শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বড়ধরনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, এশিয়ার ১২ কোটি ৮০ লাখ শিশু মহামারি শুরুর আগে থেকেই স্কুলের বাইরে ছিল, যা বিশ্বব্যাপী স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের সংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এটি শিক্ষাজনিত একটি সংকট, যা নিরসন করা প্রয়োজন।
ডায়ালসিলেট এম/
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech