নতুন ভাড়ায় চলছে পরিবহণ, বলির পাঠা জনগন

প্রকাশিত: ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২১

নতুন ভাড়ায় চলছে পরিবহণ, বলির পাঠা জনগন

ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: পরিবহণ মালিক সমিতির টানা তিন দিন ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং বাসমালিকদের সভায় ডিজেলের দাম বাড়ায় বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

পরিবহণ ধর্মঘট তুলে নেওয়ার পর রোববার সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীতে বাস চলাচল শুরু হয়। রাতেই ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়তে দেখা গেছে।

 

সোমবার সকালে অনেক দূরপাল্লার বাস এসে রাজধানীতে পৌঁছায়। তারা নতুন নির্ধারিত ভাড়া আদায় করছে। কোনো কোনো পরিবহণ নতুন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ অনেক যাত্রীর। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা।

 

যাত্রীরা বলছেন, তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। এটি অযৌক্তিক। লিটারে ৫ টাকা করে বাড়ালে সাধারণ মানুষের জন্য ভালো হতো। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর ভয়াবহ চাপ তৈরি হয়েছে।

 

এদিকে লঞ্চের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের পর রাত থেকে শুরু হয়েছে লঞ্চ চলাচলও। রাজধানী সদরঘাটসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে রাতেই বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় লঞ্চগুলো। সকালে এসব লঞ্চ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। লঞ্চের নতুন ভাড়াকেও অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেছেন যাত্রীরা।

 

বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন সালাহউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ থেকে উৎসব পরিবহণে গুলিস্তানে যাচ্ছেন তিনি। ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুলিস্তানে যেতে আগে ৩৫ টাকা ভাড়া লাগত; তবে নতুন ভাড়ায় এখন ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের বেতন তো আগের মতোই আছে; তবে নতুন বাড়তি ভাড়ার টাকা আসবে কোত্থেকে।

 

বাঙলা কলেজ থেকে বসুন্ধরাগামী যাত্রী রাবেয়া জানান, আগে এই পথের ভাড়া ছিল ২৫ টাকা; এখন ৩৫ টাকা লাগছে।

 

তিনি বলেন, চাকরিজীবী মানুষের যে বেতন বাড়ছে না, সেটি নিয়ে কেউ কথা বলে না। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তার ওপর আবার যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি ২৭ শতাংশ।

 

সোনারগাঁওয়ের মুগড়াপাড়ার চৌরাস্তা থেকে গুলিস্তানগামী যাত্রী সাদ্দাম জানান, আগে এ রুটে ভাড়া ছিল ৪৩ টাকা; এখন দিতে হচ্ছে ৫৫ টাকা। অযথা সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হলো। সীমিত আয়ের যারা, তাদের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে এ ভাড়া।

 

যাত্রী আবুল কালাম বলেন, সদরঘাট থেকে কুড়িল বিশ্ব রোড আগে বাস ভাড়া ছিল ৩০ টাকা, তবে আজ গুলিস্তান থেকে আমাকে ৪০ টাকা ভাড়ায় বসুন্ধরায় যেতে হলো। অথচ ১০ কিলোমিটার রাস্তায় ভাড়া হওয়ার কথা ২২ টাকা।

 

তিনি বলেন, আমাদের মতো সাধারণ জনগণের কথা কে শুনবে? এ দেশে জন্ম নেওয়াই আমাদের অপরাধ।

 

বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

 

তিনি রোববার রাতে বলেন, বাস ও লঞ্চযাত্রীদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। জনগনকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে। ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে কৌশলে ভাড়া বাড়িয়ে নিলেন মালিকরা। অযৌক্তিক পদ্ধতিতে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

 

তিনি বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী, তেলের দাম বাড়লে দূরপাল্লার বাস এবং সিএনজির দাম বাড়লে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। এবার তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে সব বাসের ভাড়া বাড়ানো হলো।

 

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, নতুন ভাড়াও মালিকরা মানবেন? নাকি নানা অজুহাতে আরও বেশি ভাড়া নেবেন— সেটিই দেখার বিষয়।

 

এর আগে রোববার বিআরটিএতে বৈঠকের পর বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। আর ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চেয়ারম্যানের পাশের চেয়ারে বসা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

 

নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ভাড়ার এ নতুন হার ডিজেলচালিত বাসের জন্য প্রযোজ্য হবে। সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া এক পয়সাও বাড়ানো যাবে না, তাদের জন্য এই ভাড়া প্রযোজ্য নয়।

 

আমি বাসমালিকদের অনুরোধ করব, ধর্মঘট প্রত্যাহার করে যেন দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অল্পসংখ্যক বাস সিএনজিতে চলে। সেই সংখ্যা এক শতাংশের নিচে। তারা যদি নতুন ভাড়া কার্যকর করে তা হলে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবে।

 

তবে সিএনজিচালিত বাসের জন্যও নতুন ভাড়া কার্যকর হবে বলে তাৎক্ষণিক বক্তব্য দেন খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, এক থেকে দুই শতাংশ বাস সিএনজিতে চলে। দুই ধরনের ভাড়া থাকতে পারে না।

 

তিন দিন ধরে চলা ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বাসমালিকদের অনুরোধ করব— ধর্মঘট প্রত্যাহার করে যেন দেশ স্বাভাবিক অবস্থা হয়। সব জেলা থেকে যেন বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।

 

ধর্মঘটের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর আমাদের (সমিতি) অপেক্ষা না করে গত ৩ তারিখ সারা দেশের মালিকরা বিভিন্ন জেলায় সংবাদ সম্মেলন করে ধর্মঘট আহ্বান করে।

 

মালিকদের সঙ্গে আমরাও পরে ঐকমত্য পোষণ করি। কিন্তু পাশাপাশি জনগণের যেন দুর্ভোগ না হয়, সে জন্য আমরা সরকারি পর্যায়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটিং সার্ভিসের নামে আরটিসিতে কোনো নিয়ম নেই।

 

এর আগে ভাড়া বাড়ানো বা তেলের বাড়তি দাম প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে বাস ও ট্রাক এবং শনিবার বিকাল থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সারা দেশে সড়ক ও নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

এম/এ/

0Shares