শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে বেশি সময় ব্যয় করছে : ড. জাফর ইকবাল

প্রকাশিত: ১০:০৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২১

শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে বেশি সময় ব্যয় করছে : ড. জাফর ইকবাল

সংবাদদাতা, শাবিপ্রবি :: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কোয়ালিটি সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন। আর এ কাজে যারা সহযোগিতা করেন তাদের মধ্যে অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অথচ দুঃখের বিষয় হচ্ছে কিছু শিক্ষক ছাত্রদেরকে ঠিক করে পড়ায় না, ছাত্রদেরকে শিখাতে চান না। শিক্ষকদের মাঝে ইন্টার্নাল পলিটিক্স আছে। আমি এগুলোর বিরুদ্ধে আজীবন ফাইট করেছি। যাতে শিক্ষকরা শিক্ষার্থী বান্ধব হয়। শিক্ষকদের মাঝে পলিটিক্স থাকবে, তাই বলে শিক্ষার্থীদেরকে নিজেদের অধিকার আদায়ে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।’

 

বুধবার (১০ নভেম্বর) বিকালে শাবি প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি।

 

মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘এ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা রোড পেইন্টিং করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে থেকে হল পর্যন্ত পাই এর মান লিখে রোড পেইটিং করেছেন শিক্ষার্থীরা। মিনি অডিটোরিয়ামের দেওয়ালে বাংলার মুখ এঁকেছেন শিক্ষার্থীরা। রাস্তায়, দেওয়ালে শিক্ষার্থীরা আল্পনার মাধ্যমে ভালো ভালো বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারেন। এতে শিক্ষার্থীদেরকে বুঝতে হবে কোনটা তার অধিকার আর কোনটা তার অধিকার নয়। তাই নিজেদের অধিকারে সচেতন থাকতে হবে শিক্ষার্থীদেরকে।’

 

এদিকে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের লিডারশীপ কোয়ালিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী যে সাবজেক্টেই ভর্তি হোক না কেন, সে এখান থেকে পাস করার পর একজন কোয়ালিটিফুল ও যোগ্যতা সম্পন্ন লিডার হবেন। সে যেখানেই যাবে সেখানেই লিড দেওয়ার মতো যোগ্যতা থাকবে। যদি সে এটা অর্জন করতে না পারে, তাহলে আমি মনে করি, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেনি। আমরা যা শিখিয়েছি, তা সে শিখেনি। তাকে শিখতে হবে, তার আগ্রহ থাকতে হবে।’

 

একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অগ্রণী ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস রুমের বাইরে বেশি শিখেন। তাই শিক্ষার্থীদেরকে একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে নিজেদেরকে সংঘবদ্ধ করতে হবে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সহ-শিক্ষামূলক কর্মকান্ডগুলো থেকে বেশি শিখতে পারেন আমাদের শিক্ষার্থীরা। এ শিক্ষার মাধ্যম শিক্ষার্থীরা একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠেন।’

শিক্ষার্থীদের ফেসবুক ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি একটা বিষয় লক্ষ করলাম। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমে গিয়েছে। তারা ফেসবুকে বেশি সময় ব্যয় করছে। এটা শুধু বাংলাদেশে না, পুরো পৃথিবীর একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে কম সময় দিয়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর আহ্বান জানান।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু আমার প্রিয়। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাটানো সময়গুলোকে মিস করি। আমি বর্তমানে অবসরে আছি। আমার অবসরকালীন সময় ভালোই কাটছে। আমি যেহেতু লেখালেখি করি এই দিকে বেশি সময় কেটে যায়।’

 

এছাড়া মতবিনিময় শেষে শাবি প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালকে প্রেসক্লাবের বার্ষিক ম্যাগাজিন কথন-৩ এর সৌজন্য কপি তুলে দেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের পক্ষে শাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি জুবায়ের মাহমুদ, কোষাধ্যক্ষ নাজমুল হুদা, দপ্তর সম্পাদক আদুল্লাহ আল মাসুদ ও কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল ইসলাম রুদ্র, হাসান নাঈম ও রাশেদুল হাসানসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ