প্রকাশিত: ৮:৩১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২
ডায়ালসিলেট ডেস্ক::ভাষা আন্দোলন, বিশ্বমঞ্চের এক বিস্ময়কর আন্দোলন। এই আন্দোলন একদিকে যেমন বিশ্ববাসীর কাছে কষ্টের তেমনই একটা দৃষ্টান্ত। কয়েকটি তাজা প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে ভাষার প্রতি সম্মান দেখাতে হয়। ভাষা আন্দোলন দেশভাগের পর প্রথম কোনো আন্দোলন। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দেশের ভীত সৃষ্টি হয়। পূর্ব বাংলার জনগণ এক হওয়ার পথ তৈরি করে। ফলে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ অন্যদিকে তেমনই শোককাতর। কারণ এই আন্দোলনে তাজা প্রাণের ঝরে পরা দেখেছে বিশ্বমঞ্চ। পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র কয়েকদিন পরেই গঠিত হয় তমুদ্দুন মজলিস। সেই তমুদ্দুন মজলিসের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রাজ্ঞ ব্যাক্তিবর্গ বাংলা ভাষার ভবিষ্যত সংকট উপলব্ধি করেন। সেই সংকট থেকে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে সোচ্চার হয়। পরবর্তীতে তমুদ্দুন মজলিসের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তৈরি হয় আর কয়েকটি সংগঠন। সেই সংগঠনগুলোর সবই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দীক হলেও তাদের ডাকে সাড়া দেয় দেশের সকল ছাত্রছাত্রী ও আপামর জনতা। ঢাকার বাইরে রাজশাহী, চিটাগাং, বগুড়া শহর অন্যতম। তবে অন্যান্য শহরগুলোও আন্দোলনকে বেগবান করার জন্যই ঢাকার সংগঠনগুলো সাহস ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। সিলেট শহরও তা থেকে বাদ যায়নি। বরং সিলেটের বেশ কয়েকজন গুণী মানুষ ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে। ভাষাআন্দোলনের সময় সিলেটের বাহিরে বিশেষ করে ঢাকায় সিলেটের অনেকেই উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে সিলেটের মহীয়সী নারীরা বাংলা ভাষা আন্দোলনে ব্যতিক্রমধর্মী অদমনীয় বলিষ্ট সাহসী ভুমিকা রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ইতিহাসের পাতায় সিলেটের এই গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস স্বর্ণালী অক্ষরে লেখা রবে। ১৯৪০ সালে সারা দেশে ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠার আগেই সিলেটের মহিলারা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় রাজপথে নামে। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, সিলেটের মহিলারা ভাষার দাবিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এরা সবাই মুসলিমলীগের নেতৃত্ব কাজ করা সদস্য। এই সময়ে অন্যান্য শহরের মতো সিলেটের নারীরাও যে রাজপথে নামতে পারবে এমনটা ভাবা খুবই কঠিন ছিলো। এখন এরকম বিষয় নিয়ে ভাবতেও গা ছমছম করে। সিলেটে মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল সেই সাথে তখনও শিক্ষা ক্ষেত্রে সিলেট অনেকটা পিছিয়ে ছিলো। যদিও আজ অবধি সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভিবাজার যেনো দেশের অপরিচিত কোনো জেলা। যদিও প্রবাসিদের আয়ের পথ তৈরি হওয়ার কারণে কিছুটা এগিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রেও প্রবাসিরা নানান সমস্যার মধ্যে দিন যাপন করলেও তেমন কারও নজরে আসে না। অথচ দেশভাগের পরপরেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিলেটের নারী সমাজের গুটি কয়েজ ভদ্র মহিলা যে রাজপথে নেমে ভাষার যুদ্ধকে বাহারি রূপে রূপান্তর করার মতো সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। সে কথা ইতিহাসের পাতায় জমা রইবে। ভাষা আন্দোলনের যোগ দেওয়া এই ভদ্র পরিবারের ভদ্র ও শিক্ষিত মহিলারা ভাষার জন্য এভাবে এগিয়ে আসবে যা পরিবর্তী প্রজন্মের জন্য নিশ্চয়ই গৌরবের ব্যাপার। কিন্তু সময়ের স্রোতে আমরা সেই সব ভাষাসৈনিকদের কথা ভুলতে বসেছি। কিন্তু ভাষার এই মাসে অন্তত আমাদের প্রতিজ্ঞা করা উচিৎ তাদের জীবন সংগ্রাম নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা। আমি তাদের নাম ও পরিচিতি উল্লেখ করছি-সেই সময়ে সিলেট জেলা মহিলা মুসলিম লীগের সভানেত্রী জোবেদা রহীম, তিনি বাংলাদেশের মহিলাদের রাজনীতির অন্যতম পথিকৃত। তিনি ছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ শিলঘাট নিবাসী খান বাহাদুর শরাফত আলী চৌধুরীর কন্যা, হবিগঞ্জের খান বাহাদুর আবদুর রহিমের স্ত্রী এবং সেই সময়ের মন্ত্রীসভার প্রভাবশালী মন্ত্রী তফজ্জুল আলীর শাশুড়ী। বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী, (হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর মা), তিনি ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য। স্বামী আব্দুর রশিদ চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত ভারতের কেন্দ্রীয় বিধান সভার সদস্য। সহ-সভানেত্রী সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী (অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জননী), তিনি ছিলেন আসাম পার্লামেন্টে প্রথম মুসলমান মহিলা এমপি। সিলেটের নারী জাগরণের অগ্রদূত,ঐতিহাসিক গণভোট এবং ভাষা আন্দোলনে তার অবদান ছিলো অপরিসীম। তার স্বামী এডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ ছিলেন একজন বলিষ্ঠ আইনজীবি এবং মুসলিম লীগের প্রথম সাড়ির রাজনীতিবিদ। সিলেট জেলা মহিলা মুসলিম লীগের সম্পাদিকা সৈয়দা লুৎফুন্নেছা খাতুন, সিলেট সরকারী অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিসেস রাবেয়া খাতুন বিএবিটি, মিসেস জাহানারা মতিন, মিসেস রোকেয়া বেগম, মিসেস শাম্মী কাইসার রশীদ এমএ,বিটি, নূরজাহান বেগম, মিসেস সুফিয়া খাতুন, মিসেস মাহমুদা খাতুন, মিসেস শামসুন্নেছা খাতুন, সৈয়দা নজিবুন্নেছা খাতুন।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech