ছুরিকাঘাতে শাবি শিক্ষার্থী খুন : ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ২:৫১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২২

ছুরিকাঘাতে শাবি শিক্ষার্থী খুন : ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে বুলবুল আহমেদ (২২) নামে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে গাজিকালুর টিলায় এ ঘটনা ঘটে। বুলবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলায়।
ক্যাম্পাস এলাকায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় সোমবার রাতেই ক্যাম্পসে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রধান ফটক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা প্রক্টরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করলেও সেটা এখনো সম্ভব হয়নি। রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা প্রক্টরের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন।
এদিকে একই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় গোল চত্বর থেকে মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। তাঁরা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন।
সোমবার আহত অবস্থায় বুলবুলকে উদ্ধারে প্রথম গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম জয়। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের পার্শ্ববর্তী টিলায় বুলবুলকে আহত অবস্থায় দেখতে পায় এক ছাত্রী। এ সময় ওখান দিয়ে ফাহিম নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী যাচ্ছিল। তাকে সে বিষয়টি জানালে ফাহিম আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানায়।’
খবর পেয়ে শরিফুল দ্রুত গিয়ে বুলবুলকে উদ্ধার করে জানিয়ে বলেন, ‘আমি যখন যাই তখন পর্যন্ত বুলবুল বেঁচে ছিল। কিন্তু তাকে উদ্ধার করে ছাত্রী হলের কাছাকাছি এলে সে নিস্তেজ হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘প্রথমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালে নিয়ে যাই, সেখান থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। ’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল। তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর বুকের বাঁ পাশে ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কয়েকজন শিক্ষার্থী উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে নিয়ে যায়। সেখানেই তার পালস ছিল না। পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ’
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার ওসি নাজমুল হুদা খান বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ওই ছাত্র নিহত হয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।’ ঘটনাস্থলে তিনিসহ মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ’ শিক্ষার্থী ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে ছুটে আসেন। তাঁরা হাসপাতাল চত্বর এবং জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান নেন। বুলবুলের লোক প্রশাসন বিভাগের সহপাঠীরা মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় হাসপাতাল এলাকায় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলাম, লোক প্রশাসন বিভাগের প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম ছুটে আসেন। সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ এবং সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ হাসপাতালে যান।
বুলবুলের সহপাঠী মো. জুয়েল বলেন, ‘ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার দায় প্রশাসন কিছুতেই এড়াতে পারে না। এ ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’ নিহত বুলবুলের মা ও স্বজনরা সিলেটের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার ওসি নাজমুল হুদা খান বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ওই ছাত্র নিহত হয়েছেন। তাঁর শরীরে আঘাতের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।’ ঘটনাস্থলে তিনিসহ মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন বলে তিনি জানান।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ