প্রকাশিত: ৩:০০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২২
বড়লেখা প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের বড়লেখার এক যুবকের ফ্রান্সে মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর ওই যুবক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার নাম কাওছার হামিদ আলী (৩৫)। তিনি বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। বৃহস্পতিবার ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে কাওছার হামিদ আলীর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছে তার পরিবার।
পরিবারের অভিযোগ, আলীকে মারধর করে হত্যার পর ঘটনা আড়াল করতেই ঘাতকরা দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে ফেসবুকে প্রচার করছে। বর্তমানে তার লাশ ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে রয়েছে। তার লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
নিহত আলীর বাবা আবুল হোসেন শুক্রবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে কাওছার হামিদ আলী দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সে বসবাস করছে। এর আগে সে লন্ডনে ছিল। ফ্রান্সে সে উবার চালিয়ে আয়-রোজগার করতো। গত ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে ফ্রান্স থেকে সামাদ আহমদ তামিম (সাবেক ইউপি মেম্বার) নামে এক যুবক আমাকে ফোন করে বলেন, আলী আমার কে হয়? আমি বলেছি, সে আমার ছেলে। তখন সামাদ বলেন, বড়লেখা ও কুলাউড়ার কয়েকজন যুবক আলীর কাছে উবারের আইডি ব্যবহারের টাকা ও ঘর ভাড়ার টাকা পান। আলী নাকি টাকাটা দিচ্ছেন না। তাকেও ফোনে মেলে না ও খুঁজেও পাওয়া যায় না। এই টাকাটা কিভাবে পাওয়া যায়। তখন আমি বলেছি, বিষয়টি আমার তো জানা নেই। এ সময় তিনি ফোনে শুনতে পান সামাদের পাশে থাকা কারা কাকে বলছেন, ওকে মার।
তিনি বলেন, ওই দিনই আমার ছেলেকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে বলে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। গত ২০ অক্টোবর ফ্রান্সস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমাকে কল করে জানানো হয়- আমার ছেলে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
আবুল হোসেন বলেন, এরপর ফ্রান্স থেকে একজন সাংবাদিকসহ আরও কয়েকজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা আমার কাছে বলেছেন, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি তার ছেলেকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।
এদিকে আলীর মৃত্যু খবরে দেশ-বিদেশে অনেকে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে স্ট্যাটাসে শেয়ার করছেন। তারাও আলীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। অন্যদিকে দীর্ঘ ২৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর বাসার মালিক আলীর কোনো খোঁজ না নেওয়ায় ফ্রান্সে বসবাসরত বাঙালি কমিউনিটির মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ফ্রান্স প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ মোবাইল ফোনে বলেন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের সচিব শাহরিয়ার হোসেন শাকিল আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে ফ্রান্সের পুলিশ তাকে জানিয়েছে, কাওছার হামিদ আলী দুর্ঘটনায় মারা যায়নি; তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা আলীর নিজ এলাকা বড়লেখা ও কুলউড়ার বলে তিনি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছেন। তাদের নাম-পরিচয়ও তিনি জেনেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে প্যারিসের মাখদরমি এলাকায় উবারের আইডি নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে কয়েকজন যুবক প্রথমে আলীর ঘাড়ে আঘাত করে। এরপর পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ফেলে দেয়। এতে আলী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৩ দিন তিনি কোমাতে ছিলেন। এরপর ১৩ অক্টোবর মারা যান।
সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ আরও বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছেন- ঘটনার দিন তিনি রাত দেড়টার পরে কাজ থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন তিনি দেখতে পান সামাদ মেম্বার কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলছে। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে আলীর ওপর আঘাত করছে। তখন তিনি সামাদ ও আলীকে চিনতে পেরে ঘটনাটি মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন। ঠিক তখন কুলাউড়ার একজন পেছন থেকে এসে আলীকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ফেলে দেয়। এরপর সবাই দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এখন হত্যার ঘটনা আড়াল করতে অভিযুক্তরা কৌশলে আলী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে বলে প্রচার করছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় বাঙালি কমিউনিটির লোকজন বলেছেন- আলী ২৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর বাসার মালিক আলীর কোনো খোঁজ নেননি। এতে তাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করছেন ঘটনার সঙ্গে বাসার মালিকের কোনো সম্পৃক্ততা হয়তো থাকতে পারে। সব প্রক্রিয়া শেষে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আলীর লাশ দেশে পাঠানো হবে।
বড়লেখা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আলী আহমদ চৌধুরী জাহিদ মোবাইল ফোনে শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে বলেন, ফ্রান্সে আমাদের এলাকার বাসিন্দা কাওছার হামিদ আলী মারা গেছেন বলে তার পরিবারের কাছ থেকে শুনেছি। আমরা তার বাড়িতে গিয়েও খোঁজ নিয়েছি।
-সূত্র : যুগান্তর
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech