রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন স্পেন

প্রকাশিত: ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ২০, ২০২৩

রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন স্পেন

স্পোর্টস ডেস্ক :: পারলেন না লুকা মদরিচ। ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে একটি শিরোপা জয়ের শেষ সুযোগটাও হারিয়ে ফেললেন টাইব্রেকার নামক লটারি ভাগ্যের কাছে হেরে। রুদ্ধশ্বাস ৯০ মিনিটের লড়াই। এরপর ম্যাচ হলো আরও ৩০ মিনিট। ১২০ মিনিটের লড়াই শেষে ম্যাচ গড়ালো টাইব্র্রেকারে। সেখানেও হলো শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই। ৬টি করে শট নিয়েছে দুই দল। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৫-৪ ব্যবধানে হেরে গেলো ক্রোয়েশিয়া। উয়েফাা নেশন্স কাপ পেয়ে গেলো নতুন চ্যাম্পিয়ন।

 

বিশ্বকাপের পর লুইস এনরিকেকে বরখাস্ত করে স্পেন। কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় প্রবীন লুইস ডি লা ফুয়েন্তেকে। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই তিনি স্পেনকে উপহার দিলেন একটি মহাদেশীয় শিরোপা। ২০১২ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের পর এই প্রথম বড় কোনো শিরোপা জিতলো স্প্যানিশরা।

 

নেদারল্যান্ডসের রটারডামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটিতে সবই ছিল। দৃষ্টিনন্দন ফুটবল, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, ব্যক্তিগত ড্রিবলিং, স্কিলের দারুণ প্রদর্শনী। কিন্তু গোলটাই হলো না শুধু। দুই দলের ডিফেন্স এবং গোলরক্ষকরা গোল বঞ্চিত করে ফরোয়ার্ডদের। যে কারণে খেলা গড়া টাইব্রেকারে। যেখানে বাজিমাত করলো তারুণ্য নির্ভর স্পেন।

 

তবে স্পেনের এই জয়ে শেষ মুহূর্তের নায়কে পরিণত হন গোলরক্ষক উনাই সিমোন। পেনাল্টি শ্যুটআউটে ক্রোয়েশিয়ানদের দুটি শট ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তার বিশ্বস্ত হাত গলে জালে বল জড়াতে ব্যর্থ হন ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার লোভরো মাজের এবং ব্রুনো পেটকোভিক। স্পেনের আয়েমেরিক লাপোর্তে শট মিস করলেও দানি কার্ভাহালের শট বিজয় নিশ্চিত করে দেয় তাদের।

 

মাত্র দুই বছর আগে এই দুই দলের মধ্যেই হয়েছিলো নাটকীয় এক ম্যাচ। ২০২১ সালের ২৮ জুন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ষোলোয় মুখোমুখি হয়েছিলো দুই দল। ৮ গোলের ম্যাচটি শেষ হয়েছিলো নাটকীয়ভাবে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিট খেলা হয়েছিলো সেদিন। ৫-৩ গোলে ক্রোয়াটদের হারিয়ে কোয়ার্টারে জায়গা করে নিয়েছিলো স্পেন।

 

রোববার রাতেও তেমন নাটকীয় সমাপ্তির আশা করেছিলো সবাই। কিন্তু শেষটা হয়েছে নাটকের চেয়েও নাটকীয়ভাবে। দুই বছর আগেও ফাইনালে উঠেছিলো স্পেন। সেবার ফ্রান্সের কাছে তারা হেরেছিলো ২-১ গোলের ব্যবধানে। অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জেতা লুকা মদরিচকে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করতে হবে অনেকটা খালি হাতেই।

 

ডাচ লিগের ক্লাব ফেয়েনুরডের রটেরডাম ডি কুইপ স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই ছিল আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের খেলা। ডোমিনিক লিভাকোভিক শুরু থেকেই স্প্যানিশ আক্রমণ প্রতিহত করে ক্রোয়েশিয়ার শক্ত চরিত্রকে প্রমাণ করে যাচ্ছিলেন। আলভারো মোরাতার নিশ্চিত গোল হওয়া শট, গাবির নিচু করে নেয়া শট- প্রথমার্ধের ২০-২৫ মিনিট তো স্প্যানিশ আক্রমণ বলতে গেলে একাই ঠেকিয়েছেন লিভাকোভিক।

 

১২ মিনিটেই গোল পেতে পারতেন গাবি। কিন্তু স্পেনকে বঞ্চিত করে তিনি বল পাঠিয়ে দেন পোস্টের বাইরে। ২৩ মিনিটে আন্দ্রে ক্রামারিক বলতে গেলে প্রায় ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আয়েমেরিক লাপোর্তের ক্ষিপ্র গতির কাছে তিনি হার মানেন।

 

তবে এরপর স্পেন সত্যিকার কোনো সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো লুকা মদরিচের নেতৃত্বাধীন ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ড ধীরে ধীরে খেলা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। দ্বিতীয়ার্ধে ক্রোয়েশিয়ার ইভান পেরিসিচ বাম পাশ থেকে বল নিয়ে উঠে এসে ক্রস দেন মারিও প্যাসালিককে। কিন্তু তিনি মিস করলেও জোসিপ জুরানোভিচ অসাধারণভাবে বলটি রিসিভ করে স্পেনের পোস্ট লক্ষ্যে শট নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, বলটি চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে বাইরে।

 

৬৬ মিনিটে ইয়েরেমি পিনোর পরিবর্তে মাঠে নামেন আনসু ফাতি। ৮৪তম মিনিটে তিনি প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন। রদ্রি দারুণ একটি ক্রস করেন ফাতির উদ্দেশ্যে। কিন্তু পেরিসিক ছিলেন লাইনে। গোলরক্ষককে আনসু ফাতি পরাস্ত করার আগেই তিনি বলটি ক্লিয়ার করে দেন।

 

অতিরিক্ত সময়ে এসে লোভরো মাজের গোলের মুখে পৌঁছে গিয়েছিলেন বল নিয়ে। কিন্তু ডিফেন্ডার নাচো তাকে গোল লক্ষ্যে শট নিতে ব্যর্থ করে দেন। এর একটু পরই স্পেনের দানি ওলমো দারুণ একটি শট নিয়েছিলেন। যা চলে যা বারের ওপর দিয়ে।

 

স্পেনের জয়ের নায়ক গোলরক্ষক উনাই সিমোনে ম্যাচের পর বলেন, ‘এটা ছিল খুবই কঠিন একটি ম্যাচ। আমরা জানতাম, ম্যাচটি খুব সহজে জিততে যাচ্ছি না।’

 

বিজয়ী দলের তরুণ সদস্যদের নিয়ে কোচ ডি লা ফুয়েন্তে বলেন, ‘এই খেলোয়াড়গুলো জিততে অভ্যস্ত। আগামী দিনগুলোতেও তারা জিততে থাকবে। আশাকরি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবো। আশা করি দলের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা ফিরে এসেছে এবং আমরা আরও জিততে থাকবো।’

 

0Shares