কৃষকদের মধ্যে বণ্টন না করে টাকা আত্মসাৎ

প্রকাশিত: ১:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০২৩

কৃষকদের মধ্যে বণ্টন না করে টাকা আত্মসাৎ

ডায়াল সিলেট ডেস্ক:  খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন এবং গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃষকদের কাছে সাশ্রীয় মূল্যে কৃষিপণ্য পৌঁছে দিতে বড় অংকের ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। কৃষকদের চাষাবাদে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য প্লট প্রদর্শনীতে বীজ, সার, ওষুধ ও নগদ অর্থও বরাদ্দ রয়েছে।
কিন্তু সরকারের এই মহতি উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করছেন না মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। মো. রেজাউল করিম নামের এই কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনীতে বরাদ্দকৃত টাকা, সার, বীজ ও অন্যান্য উপকরণ কৃষকদের মধ্যে বণ্টন না করে নিজেই আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশিক্ষণ ও মাঠ প্রদর্শনীতে অনিয়ম করেছেন তিনি। অধিকাংশ সময় সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত কাজে। প্রায় দিনই সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে উনার স্ত্রীকে মৌলভীবাজার শহরে কেনাকাটা করতে দেখা যায়। কৃষি কর্মকর্তার এমন অনিয়মে হতাশ উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা।
এতসব অনিয়ম ও দুর্নীতির পরও এবার জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ কৃষি অফিসার হয়েছেন ওই কর্মকর্তা। একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, জেলা অফিসে নানা সুবিধা দিয়ে তিনি এবার শ্রেষ্ঠ কৃষি অফিসার হয়েছেন।
এদিকে রাজনগর উপজেলা কৃষি অফিসের চলমান প্রকল্পসমূহ, বরাদ্দ এবং সুবিধাভোগী কৃষকদের তথ্য জানতে তথ্য অধিকার আইনে ১৯ জুন আবেদন করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করেননি ওই কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে জানা যায়,  ২০২২-২৩ অর্থবছরে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের ক্রিপার প্রদর্শনীপ্রাপ্ত উত্তরভাগ ইউনিয়নের আব্দুল কালাম বলেন, ৫ জন কৃষককে একত্রে ১ বস্তা লাল সার, ৫ কেজি করে কালো সার, সাদা সার ২০ কেজি দেওয়া হয়েছে। বীজ কেনার জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছি। কিন্তু জমি প্রস্তুত, আন্তঃপরিচর্যা কিংবা মাচা তৈরির জন্য কোনো টাকা পাইনি।
টেংরা ইউনিয়নের লতি কচু প্রদর্শনীর কৃষক আছকান মিয়া বলেন, নগদ টাকা, সার ও ওষুধ কম দেওয়ায় কৃষি অফিসারের সঙ্গে ঝগড়া করেছি। তার পরও বরাদ্দ অনুযায়ী পাইনি।
পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মরিচ প্রদর্শনীর কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, ২০ গ্রাম বীজ এবং সব ধরনের সার মিলিয়ে ১৫-২০ কেজির মতো পেয়েছি। নগদ টাকা পাইনি।
কামারচাক ইউনিয়নের হলুদ প্রদর্শনীর কৃষক ওয়ারিশ মিয়া বলেন, ৫ মনের মতো বীজ এবং বিভিন্ন ধরনের কিছু সার পেয়েছি। কিন্তু নগদ টাকা পাইনি। রাজস্ব খাতে আমার স্ত্রীর নামে একটি প্রদর্শনী ছিল সেটা থেকে ১৫’শ টাকা পেয়েছি।
টেংরা ইউনিয়নের চীনা বাদাম প্রদর্শনীর কৃষক কুতুব উদ্দিন বলেন, ১৫ কেজি বীজ, ৩ ধরনের ৪০ কেজি সার পেয়েছি। কিন্তু নগদ কোনো টাকা পাইনি।
কন্দাল ফসল প্রকল্পে মুখী কচু প্রদর্শনীর মনসুরনগর ইউনিয়নের তাহেরা বেগম বলেন, ১০ কেজি করে সার ও ১৫’শ টাকা পেয়েছি। বীজ পাইনি।
উত্তরভাগ ইউনিয়নের গাছ আলু প্রদর্শনীর কৃষক মাহমুদুল হক বলেন, ১ বস্তা বীজ, লাল, সাদা ও বড়ী সার ৩০ কেজি এবং ২ হাজার টাকা পেয়েছি। একই অভিযোগ উপজেলার অন্যান্য প্রদর্শনী প্রাপ্ত কৃষকদের।
নাম গোপন রাখার শর্তে একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ১টি মাঠ প্রদর্শনী করে ওই জায়গায় আরও ৩-৪টি ব্যানার লাগিয়ে ছবি তোলেন। সম্প্রতি একটি প্রশিক্ষণে কৃষি কর্মকর্তা তার বাসার কাজের বুয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জমি প্রস্তুত, আন্তঃপরিচর্যার টাকা কৃষকদের না দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কিছু দিনের মধ্যে দেওয়া হবে।
অর্থবছর তো শেষ হয়েছে তাহলে কেন কৃষকদের টাকা দেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকা উত্তোলন করে অফিসের অ্যাকাউন্টে রেখেছি। কিছু দিনের মধ্যে দিয়ে দিব।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি নির্দেশনা অমান্য, দুর্নীতি এবং অনিয়ম করার পরও কীভাবে শ্রেষ্ঠ কৃষি অফিসার হয়েছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
আপনাকে সুবিধা দিয়ে রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এবার শ্রেষ্ঠ কৃষি অফিসার হয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা তো আমাকে ভালো করে চিনেন। টাকা খেয়ে কাউকে পুরস্কৃত করার জন্য কৃষি অফিসার হইনি।

0Shares