প্রকাশিত: ২:৫৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২৩
ডায়াল সিলেট রিপোর্ট :: সংস্কারের জন্য আজ মঙ্গলবার থেকে দুই মাস ক্বিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পুর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত স্বাক্ষরিত এক নোটিশে জানানো হয়, ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্বিনব্রিজ দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
নোটিশে বলা হয়, সিলেটের ঐতিহাসিক এই সেতুতে অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচলের কারণে বর্তমানে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির কয়েক জায়গায় যানবাহনের ধাক্কায় গার্ড রেলিং, স্টিল ট্রাস বেঁকে গেছে। কয়েক জায়গায় স্টিলের পাত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকায় জরুরিভিত্তিতে সেতুটি মেরামত করা প্রয়োজন। সংস্কারের জন্য ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্বিনব্রিজ দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এসময় জনসাধরণকে বিকল্প পথে যাতায়াতের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১০ জুলাই সেতুটির সংস্কার কাজের সময় যান চলাচল বন্ধ রাখতে সিলেট মহানগর পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে পত্র দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পুর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, সপ্তাহখানেক আগে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ক্বিনব্রিজ মেরামতের জন্য চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে জানানো হয়েছে সংস্কার কাজের জন্য দুই মাস বন্ধ থাকবে ক্বিনব্রিজ।
তিনি বলেন, ক্বিনব্রিজ সওজের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও লোহার তৈরি এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ অধিক পারদর্শী। তাই ক্বিনব্রিজ সংস্কার ও কিছু মেরামত কাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের সেতু বিভাগই সংস্কার কাজ করবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সেতুর কাঠামো যাতে যথাযথ থাকে, এ জন্য রেলওয়েকে সংস্কার করতে দেওয়া হয়েছে।
সিলেটের পরিচিতির অংশ হয়ে ওঠা ক্বিনব্রিজ নির্মাণ হয় ব্রিটিশ আমলে। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্ণর মাইকেল ক্বিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় ‘ক্বিনব্রিজ’। প্রায় নয় দশক ধরে সচল সেতুটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট।
দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে জরাজীর্ণ এ সেতু। যান চলাচলেরও অনুপযোগী হয়ে আছে। তবু ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। কয়েক দফা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, জরাজীর্ণ ক্বিনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে ২০২০ সালে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস। ওই বছরেরই জুনে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে নানা জটিলতায় আটকে যায় সংস্কার কাজ।
সিলেট নগরের মাঝামাঝি এলাকার এই সেতুটি সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে এটি দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে দুইদিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে সিটি করপোরেশন। তবে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে ৫২ দিন পর যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হয়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ক্বিনব্রিজ সিলেট তথা দেশের একটি ঐতিহ্য। সিলেটের পরিচয়বহনকারী স্থাপত্য এটি। তাই এটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যান চলাচল বন্ধ করে ফুটওভার ব্রিজে (পদচারী-সেতু) রূপান্তর করার জন্য একটি প্রস্তাব আমরা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সওজকে দিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, নাগরিকদের দাবির মুখে হালকা যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় ভারি যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech