শান্তিগঞ্জ থেকে বিপুল পরিমাণ লাঠিসোটা ও মাদক উদ্ধার

প্রকাশিত: ৩:৩২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০২৩

শান্তিগঞ্জ থেকে বিপুল পরিমাণ লাঠিসোটা ও মাদক উদ্ধার

পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার ২

শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি :: আপাতত উশৃঙ্খল শান্তিগঞ্জ থানা এলাকা। হাসনাবাজের ‘ট্রিপল’ মার্ডার থেকে কিশোরী রাজনার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার। মাঝে ছাগলকাণ্ড, ক্যারামকাণ্ডের মতো ছোট ছোট আরও একাধিক ঘটনা। সব মিলিয়ে গত তিন সপ্তাহ সময় ধরে সুনামগঞ্জে টক অব দ্য জেলা হচ্ছে শান্তিগঞ্জ উপজেলা। শান্তির এই জনপদ হঠাৎ করে কেন এতো অশান্ত হয়ে উঠেছে? এমন প্রশ্নই সকলের মুখে মুখে। অশান্ত পরিস্থিতিকে শান্ত করতে অন্যান্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ব্যপক তৎপরতা দেখাচ্ছে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ। পরিস্থিতিকে শান্ত ও সুশৃঙ্খল রাখতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে তারা।

 

এরই ধারাবাহিকতা মঙ্গলবার দিনব্যাপী উপজেলার দাঙ্গাপ্রবণ এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অভিযানে অনেকটা সফলও হয়েছে তারা। অসংখ্য লাঠি-সোঁটা, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ বিপুল মাদকদ্রব্যের সাথে এক নারী ও এক পুরুষ মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হাসনাবাজের আলোচিত ‘ট্রিপল’ হত্যার ঘটনায়ও পুলিশের ব্যপক তৎপরতায় ২০ জন আসামিকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

এদিকে, ঘটনার ৬ দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও এখনো স্কুলছাত্রী রাজনা (১৬) হত্যার ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ, তবে বসে নেই তারা। এ বিষয়ে ব্যপকভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে একাধিক লোককে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই এই ২০ দিনের মধ্যে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ছোট-বড় ৭টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনাই উপজেলাকে সুনামগঞ্জের মধ্যে সর্বোচ্চ আলোচনায় রেখেছে। ৭ জুলাই হাসনাবাজে কাঁঠাল নিলামকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ৩ জনের মৃত্যু উপজেলাকে আলোচনার শীর্ষে নিয়ে যায়। শান্তিগঞ্জে জলন্ত আগুনে আরেকটু ঘি ঢেলে দেয় ১৪ জুলাই শুক্রবারের ঘোড়াডুম্বুরের ছাগলকাণ্ড। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ২২ জুলাই শনিবার উপজেলার পাথারিয়ায় কিশোরী রাজনার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার সমস্ত জেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। আরেক দফা অশান্ত হয় শান্তিগঞ্জ। পরের দিন রবিবার পুলিশ প্রশাসন যখন কিশোরী রাজনার মৃত্যুর রহস্য ভেদ করতে ব্যস্ত তখন আহমানমারা সেতু সংলগ্ন গ্রাম জয়কলসে ও পশ্চিম পাগলার নোয়াবাড়িতে পানিতে ডুবে পৃথকভাবে দুই শিশুর মৃত্যুর খবর সাধারণের মনকে বিষিয়ে তুলে।

 

শনিবার ঠাকুরভোগে ক্যারামখেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। এতে আরও বিষন্ন হয় উপজেলাবাসীর মন। তখনো কেউ জানতো না যে, চিকারকান্দি থেকে আরও বড় দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে উপজেলাবাসীর জন্য। রবিবার দিবাগত রাতে অর্থাৎ সোমবার গভীর রাতে আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে চিকারকান্দি গ্রামের হাজিবাড়ির ৯টি বসতঘর। এসময় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে আমরোজ মিয়া (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন।

 

সর্বশেষ মঙ্গলবার দিনব্যাপী ব্যপক সফলতা দেখিয়েছে থানা পুলিশ। রাত ১১টার দিকে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামে প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে ৯৬ বোতল ভারতীয় মদ ও ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় গ্রেপ্তার করেছে মাদক কারবারি মো. আছাবুল মিয়া ও পারভীন আক্তারকে। কান্দিগাঁও গ্রামে মো. তাজ উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এ বিপুল সংখ্যক মাদকদ্রব্য ও আসামিদ্বয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আছাবুল মিয়া একই গ্রামের মাদ্রাসাপাড়ার মৃত আছদ্দর আলীর ছেলে ও পারভীন আক্তার মো. তাজ উদ্দিনের স্ত্রী। এছাড়াও দিনের বেলা উপজেলার বেশ কয়েকটি দাঙ্গাপ্রবণ গ্রামে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে তারা।

 

শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনায় উপজেলার ঠাকুরভোগ, সাপেরকোণা, রনসী, ঘোড়াডুম্বুর, পিঠাপশি, শ্রীরামপুর, আসামমোড়া, জাহানপুর, হাসনাবাজ, উপ্তিরপাড়সহ দাঙ্গাপ্রবণ অন্যান্য গ্রামসমূহে অভিযান চালিয়ে রামদা, ঢাল, সুলফি, টেটাঁ, বল্লম, কুচা, লাঠিসহ শতাধিক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এসময় তিনটি ওয়ারেন্ট তামিল করা হয়। এছাড়াও পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের ৯৬ বোতল ভারতীয় অফিসার্স চয়েজ মদ ও ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধারসহ মাদক কারবারি আছাবুল মিয়া ও পারভীন আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

0Shares