ঋষি সুনাকের বাসভবন কালো কাপড়ে ঢেকে দিলেন পরিবেশবাদীরা

প্রকাশিত: ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০২৩

ঋষি সুনাকের বাসভবন কালো কাপড়ে ঢেকে দিলেন পরিবেশবাদীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নীতিকে পাশ কাটিয়ে উত্তর সাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমতি দেওয়ায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ব্যক্তিগত বাসভবন কালো কাপড়ে ঢেকে দিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। সুনাকের এই বাসভবনটি ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা ইয়র্কশায়ারে অবস্থিত।

 

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিনপিসের যুক্তরাজ্য শাখা গ্রিনপিস ইউকে কর্মীরা এই কর্মসূচি পালন করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। একই দিন ব্রিটেনের প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটেও এই সংস্থার কর্মীদের নেতৃত্বে প্রতিবাদী সমাবেশ হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

গ্রিনপিস ইউকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হয়েছে বৃহস্পতিবারের কর্মসূচির বিভিন্ন ছবি। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইয়র্কশায়ারে কালো কাপড়ে ঢাকা সুনাকের বাসভবনের ছাদের রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন গ্রিনপিস ইউকের চারজন কর্মী, আর নিচের লনে দু’জন কর্মী হাতে একটি কালো কাপড়ের ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ব্যানারে লেখা— ‘ঋষি সুনাক, কোনটি গুরুত্বপূর্ণ— তেলের মুনাফা নাকি আমাদের ভবিষ্যৎ?’

 

সকাল ৯ টার দিকে গ্রিনপিস ইউকের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হয় এই ছবি। তারপরও অন্তত ২ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেছেন প্রতিবাদকারীরা। পরে ইয়র্কশায়ার পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়।

 

উল্লেখ্য, পশ্চিমা অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও দীর্ঘদিন ধরে সরকারিভাবে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নীতি গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল। তাদের এই আন্দোলনের জেরে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেটি হলো, এখন থেকে প্রতি বছরই পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে ধাপে ধাপে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য কার্বন বা জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবে যুক্তরাজ্য।

 

কিন্তু ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ বাহিনী বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর জ্বালানি পণ্য তেল, গ্যাস ও কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। রাশিয়ার জ্বালানি পণ্যের ওপর নিষেধজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যেও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম।

 

জ্বালানি পণ্যের এই মূল্যস্ফীতির ব্যাপক প্রভাব পড়ে যুক্তরাজ্যের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ওপর। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েন দেশটির সীমিত আয়ের লোকজনরা। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি জরিপে দেখা গেছে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে তিন বেলার খাদ্য কেনার সামর্থ্য নেই— এমন লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাজ্যে।

 

জনসাধারণের এই ভোগান্তি দূর করতে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো সংক্রান্ত পূর্বের নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত বেশ স্পষ্টভাবেই দিয়েছে ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন সরকার। সোমবার এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, উত্তর সাগরের যুক্তরাজ্য উপকূলের গভীর ও অগভীর বিভিন্ন এলাকায় তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধানের জন্য শতাধিক লাইসেন্স ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগ্রহী কোম্পানিগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতি।

 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কয়লা অনুসন্ধানের লাইসেন্সও ইস্যু করবে সরকার।

 

ব্রিটিশ সরকারের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে গ্রিনপিস ইউকেসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। গ্রিনপিস ইউকের একজন নেতৃস্থানীয় সংগঠক রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের দাবি একটিই। আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে একজন জলবায়ুবান্ধব নেতা হিসেবে দেখতে চাই। জলবায়ু ধ্বংসকারী হিসেবে নয়।’

 

সুনাক অবশ্য এখন দেশে নেই। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ছুটি কাটাচ্ছেন তিনি।

 

-সূত্র : রয়টার্স

https://www.reuters.com/world/uk/protesters-drape-home-uk-pm-sunak-black-fabric-over-energy-policy-2023-08-03/

 

0Shares