প্রকাশিত: ৪:১৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০২৩
ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে আর সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। তারা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে হবে। তার শরীরে প্রতিনিয়ত পানি জমছে। বর্তমানে বেগম জিয়া জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। বাংলাদেশে তারা আর তেমন কোনো চিকিৎসার অপশন নেই। যদি উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভাব হবে। ’
সোমবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও শারীরিক সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে করা এক সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য প্রফেসর নুরুদ্দিন বলেন, আমাদের হাতে আর কোনো চিকিৎসা নেই। উনার (খালেদা জিয়ার) চিকিৎসার জন্য আমরা আপাতত শুধু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে পারছি। এর ফলে উনার শরীর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে উনার ওপর হয়তো আর কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। তাই এ দেশে উনার আর কোনো চিকিৎসা নেই। উনার বুকে এবং পেটে প্রতিনিয়ন পানি জমে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। উনার শরীর থেকে পানি বের করার জন্য কিছুদিন পর পর সিসিউতে নেওয়া হচ্ছে। তাই খালেদা জিয়ার ভালো উন্নত চিকিসার জন্য তাকে বিদেশ নিতে হবে। ’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সমন্বয়কারী প্রফেসর ডা. এফএম সিদ্দিকী বলেন, আমরা মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখেছি বেগম খালেদা জিয়া সিরোসিস অব লিভার রোগে আক্রান্ত। এর পাশাপাশি উনার হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ অনান্য রোগ আছে। ফলে সিরোসিস অফ লিভার রোগটা এখন মৃত্যুঝুঁকি হয়ে যেতে পারে বলে আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। যদি টিপস করানো হয় বিদেশের কোনো মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সেন্টারে এবং পরবর্তীতে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করানো হয়, তাহলে সম্ভবত আমাদের হাতে এখনও অপশন আছে। হয়তো উনার উন্নতি ঘটাতে পারব।
লিভারের সংক্রমণের কারণে বার বার পেটে পানি চলে আসছে বেগম জিয়ার এমন মন্তব্য করে ডা. এফএম সিদ্দিকী বলেন, উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলেও কাজ হচ্ছে না। পেট থেকে পানি হৃদযন্ত্র পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। এজন্য এরই মধ্যে তাকে দুই দুই বার সিসিইউতে নেওয়া হয়।
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘বেগম জিয়ার শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হওয়ায় এ পর্যন্ত চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। আমাদের হাতে আর কিছুই নেই। যা কিছু করার ছিল করেছি। উন্নত চিকিৎসাই একমাত্র ভরসা। দুই বছর আগে টিপস পদ্ধতিতে চিকিৎসা হলে বেগম জিয়ার পেটে ও হৃদযন্ত্রে রক্তক্ষরণ হতো না। উনার অবস্থাও এত আশঙ্কাজনক হতো না। ’ তিনি বলেন, ‘যে টিপের কথা বলেছি ইমিডিয়েটলি দরকার। এর প্রসিডিওর হলো তার বুকে-পেটে পানি জমেছে এটা চলে যাবে। আর রক্তক্ষরণ হবে না। এই টিপস বাংলাদেশে হয় না। এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্টও বাংলাদেশে হয় না। ’
টিপস ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বাংলাদেশে হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৬ ও ২০০৮ সালে বারডেমে পরীক্ষামূলকভাবে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট চালু হলেও সেটি অব্যাহত রাখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকদিন আগে পরীক্ষামূলক চালু হয়েও আবার বন্ধ হয়ে গেছে। যেই কেসস্টাডিগুলো ছিল সেগুলো পরীক্ষামূলক। কিন্তু বেগম জিয়ার মতো রোগীর ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। বেগম জিয়ার বর্তমানে যে জটিল রোগে ভুগছেন সেগুলো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কোনো কমন রোগ না, এগুলো খুবই জটিল। এর চিকিৎসা দেশে সম্ভব না। ’
সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এভার কেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট কনসালটেন্ট ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সমন্বয়কারী প্রফেসর ডা. এফএম সিদ্দিকী, গ্যাসট্রএন্টোলজিস্ট প্রফেসর ডা. এ কিউ এম মহসিন , হেপাটোলজিস্ট প্রফেসর ডা. নুর উদ্দিন আহমেদ, এভার কেয়ার হাসপাতালের সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এস এম এ জাফর, ডা. আহসানুল আমিন, বেগম জিয়ার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক কার্ডিওলজিস্ট ডা. আল মামুন, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো রফিকুল ইসলাম, ক্রিটিকাল কেয়ার স্পেশালিস্ট প্রফেসর ডা. মো জাফর ইকবাল, ফিজিসিয়ান ডা. জিয়াউল হক, প্রফেসর ডা. শামসুল আল আমিন, সার্জন ডা. শেখ ফরিদ আহমেদ প্রমুখ। উল্লেখ্য, দুই মাস এক দিন যাবত এভার কেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে খালেদা জিয়ার ‘মৃত্যুঝুঁকি অত্যন্ত বেশি’ এবং তার লিভার প্রতিস্থাপন করার লক্ষ্যে অতিসত্ত্বর বিদেশে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলনে তাঁর মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয় খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন করার সুযোগ দেয়া হলে দীর্ঘ সময় সুস্থভাবে বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে।
খালেদা জিয়ার প্রধান ব্যক্তিগত চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলনে জানান যে খালেদা জিয়ার মূল অসুস্থতা ‘লিভার সিরোসিস জনিত পোর্টাল হাইপারটেনশন’। “যতক্ষণ পর্যন্ত সিরোসিস জনিত পোর্টাল হাইপারটেনশনের চিকিৎসা না করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার অবস্থার অবনতি হতে পারে। আর এই অসুস্থতার চিকিৎসা হচ্ছে ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শান্ট বা টিআইপিএস, এবং তারপর লিভার প্রতিস্থাপন”, বলেন চিকিৎসক মি. সিদ্দিকী।
হৃদরোগ, ডায়বেটিস, কিডনি ও লিভারের জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় খালেদা জিয়া ভুগছেন বলে জানান মি. সিদ্দিকী। বর্তমান অবস্থায় মেডিকেল বোর্ডের ‘সমস্ত চিকিৎসার সুযোগ শেষ হয়ে আসছে’ বলেও জানান ডাক্তার ফখরুদ্দিন সিদ্দিকি। “বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে তার টিআইপিএস পরবর্তী লিভার প্রতিস্থাপন করা গেলে এখনো হয়তো আমরা তার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারবো।”
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট একিউএম মহসিন জানান বাংলাদেশে একসময় সীমিত সংখ্যক লিভার প্রতিস্থাপন করা হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে লিভার প্রতিস্থাপন করার মত যথেষ্ট সুবিধা নেই।
এরকম পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার মত জটিল শারীরিক পরিস্থিতির রোগীকে লিভার প্রতিস্থাপন করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া টিআইপিএস চিকিৎসাও বাংলাদেশে করা সম্ভব নয় বলে জানান চিকিৎসক ফখরুদ্দিন সিদ্দিকি।
হেপাটোলজিস্ট অধ্যাপক নুরউদ্দিন আহমেদ বলছিলেন লিভার সিরোসিসের সংক্রান্ত অনেকগুলো ‘মারাত্মক জটিলতা’ রয়েছে খালেদা জিয়ার। সংক্রমণের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে করতে সেগুলো আর কাজ করছে না বলে জানান তিনি। “তার লিভার ঠিক করার জন্য এখন একমাত্র চিকিৎসা শুরুতে টিআইপিএস করা এবং তারপর লিভার প্রতিস্থাপন করা। আমাদের দেশে সেই সুযোগ নেই। এই চিকিৎসা সম্ভব কিনা তা বিদেশে বড়, উন্নত লিভার সেন্টারে যাচাই করা সম্ভব।”
বাংলাদেশে এই মুহুর্তে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করার মত ‘আর কোনো ব্যবস্থা নাই’ বলে জানান হেপাটোলজিস্ট মি. আহমেদ। তিনি বলেন সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে খালেদা জিয়ার আরো অনেক বছর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে।
টানা দুই বছর কারাভোগের পর অসুস্থতার কারণে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে ২০২০ সালের মার্চে বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এ পর্যন্ত আটবার তার মুক্তির সময়সীমা বাড়িয়েছে সরকার। অসুস্থতার কারণে এরপরের বছরখানেক সময়ের মধ্যে কয়েক দফায় খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। বর্তমান মেডিকেল বোর্ড ২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
সেসময় বিএসএমএমইউ থেকে বাড়িতে ফেরার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে তার লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি মেডিকেল বোর্ড জানতে পারে বলে জানাচ্ছিলেন মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য ও খালেদা জিয়ার প্রধান ব্যক্তিগত চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী। “খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসসহ অনেকগুলো জটিল রোগ থাকায় তার লিভার সিরোসিস জটিলতর হতে পারে বলে উদ্বেগ সবসময়ই ছিল।” সেসময় মেডিকেল বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিদেশি হাসপাতালে নেয়ার আহ্বান জানায়।
এরপর ২০২১ সালের নভেম্বরে অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর খালেদা জিয়ার একাধিকবার খাদ্যনালিতে সংক্রমণ ও রক্তপাত হয়েছিল। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে তার পেটে পানি আসার সমস্যা, অ্যাসাইটিস শুরু হয়।
প্রাথমিকভাবে তার এই সমস্যার সমাধান বাসায় রেখে করার চেষ্টা করলেও অগাস্টের শুরু থেকে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অগাস্টের ৯ তারিখে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর জানা যায় যে তার পেটের পানি জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত হয়েছে।
আগস্টের শেষদিকে চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় ইন্ট্রাভেনাস সেন্ট্রাল লাইনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার রক্তে সংক্রমণ, সেপটিসেমিয়া তৈরি হয়। এর মধ্যে তার পেটে পানি বাড়তে থাকে এবং পেট থেকে পানি ফুসফুসে প্রবেশ করে, যার ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বর মাসে দু্ইবার খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে ভর্তি করার দরকার হয়।
পরবর্তীতে এক পর্যায়ে তার পেটের ভেতরে রক্তক্ষরণও হতে থাকে এবং তাকে রক্তও দেয়া প্রয়োজন হয় বলে জানানা তার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। “যদি আমরা দুই বছর আগে তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারতাম, তাহলে আজকে তার পেটে রক্তক্ষরণ হত না বা পেটে পানি জমতো না।” বিএনপি নেতারা সবসময়ই বলে আসছিলেন যে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘সংকটাপন্ন।’
গত মাসের শেষদিকে সামাজিক মাধ্যমে এমন একটি প্রচারণা ছড়িয়ে পড়েছিল যে খালেদা জিয়াতকে ‘বিদেশে নেয়া হচ্ছে’। তবে সেসময় দল ও পরিবারের সূত্রগুলো জানিয়েছিল যে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার অনুমতি দেয়ার কোনো ইঙ্গিত সরকারের দিক থেকে তাদের দেয়া হয়নি। সেসময় তার পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার জন্য আবেদন করা হয় সরকারের কাছে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় সেই আবেদন বাতিল করে দেয়।
তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান ফৌজদারি কার্যধারার ৪০১ এর একটি উপধারা অনুযায়ী দুটি শর্তে তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার যে অনুমতি দেয়া হয়েছিলো সে আদেশও তারা বাতিল করবেন না। ফলে সরকারের যে নির্বাহী আদেশে মিসেস জিয়া শর্তসাপেক্ষে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন সেই আদেশ বাতিল না করলে তার আপাতত জেলেও ফেরত যাওয়ার সুযোগ নেই। বিএনপি আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech