বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ তলব দুর্নীতি দমন কমিশনের

প্রকাশিত: ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ, মে ২৯, ২০২৪

বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ তলব  দুর্নীতি দমন কমিশনের

ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো নোটিশে বেনজীর আহমেদকে আগামী ৬ই জুন, তার স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ই জুন হাজির হয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

 

 

 

মঙ্গলবার দুদক সূত্রে এসব তথ্যের মাধ্যমে জানা গেছে। দুদক সূত্র জানায়, সাবেক আইজিপি বেনজীর তার আয়কর ফাইলে যে সম্পদ দেখিয়েছেন, সেগুলোর বৈধ উৎস, উপার্জনের বৈধ খাত, বেনজীরের স্ত্রী ও তার সন্তানদের আয়ের খাত হিসাবে খতিয়ে দেখবে দুদক।

 

 

 

আদালতে জমা দেয়া দুদকের নথি থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর, স্ত্রী ও সন্তানদের মালিকানায় ৬২১ বিঘা জমির সন্ধান মিলেছে । দুদকের অনুসন্ধান এখনও চলমান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক বেনজীরের স্ত্রী জীশান মির্জা। তার নামে প্রায় ৫২১ বিঘা জমি খুঁজে পেয়েছে দুদক। বাকি ১০০ বিঘার মতো জমি রয়েছে বেনজীর, তার তিন মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইশা বিনতে বেনজীর ও জারা জেরিন বিনতে বেনজীর এবং স্বজন আবু সাঈদ মো. খালেদের নামে।

 

 

 

দুই দফায় আদালত তাদের নামে থাকা ৬২১ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন। আদালত সূত্র জানা যায়, ১ম দফা ২৩শে মে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রায় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি এবং ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন।

 

 

 

২য় দফা ২৬শে মে স্ত্রী জীশান মির্জার নামে পাওয়া আরও ২৭৬ বিঘা (৯১ একর) জমি, বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও এক মেয়ের নামে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট খুঁজে পেয়েছে দুদক। ফ্ল্যাটগুলোর আয়তন মোট ৯ হাজার ১৯২ বর্গফুট। এই চার ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল একদিনে (২০২৩ সালের ৫ই মার্চ) বেনজীর আহমেদ অবসরে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে। দাম দেখানো হয়েছিল মাত্র ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। গুলশানে খুঁজে পাওয়া চারটি ফ্ল্যাটের তিনটি তার স্ত্রীর নামে।

 

 

একটি ছোট মেয়ের নামে (আদালতে করা দুদকের আবেদন অনুযায়ী তিনি তখন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন)।দুই ফ্ল্যাটের যার একটি দাম ৫৬ লাখ টাকা করে। বাকি দুই ফ্ল্যাটের দাম সাড়ে ৫৩ লাখ টাকা করে। জমি ও ফ্ল্যাট ছাড়াও দুদক বেনজীর আহমেদ ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র খুঁজে পেয়েছে।

 

 

 

গত রোববার আদালতে দুদকের পক্ষে লিখিতভাবে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা এসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও জব্দের আবেদন করেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সংস্থাটির উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলাম।

 

 

 

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের নামে থাকা এসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দ (ক্রোক) ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।

 

 

 

২০২১ ও ২০২২ সালের বিভিন্ন সময় ১১৩টি দলিলে এসব জমি কেনা হয়। দলিলমূল্য দেখানো হয় মোট ১০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ফলে প্রতি শতাংশের দাম পড়েছে গড়ে সাড়ে ১১ হাজার টাকার মতো। বিঘা পড়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এর আগে খোঁজ পাওয়া ৩৪৫ বিঘা জমির দলিলমূল্য দেখানো হয়েছিল ১৬ কোটি ১৫ টাকার কিছু বেশি। বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ই এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, তার স্ত্রীর নামে মাদারীপুরে জমিগুলো কেনা হয় তিনি আইজিপি থাকার সময়।

 

 

 

বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের শতভাগ মালিকানায় থাকা সাভানা ন্যাচারাল পার্ক, সাভানা ইকো রিসোর্ট ও একটি শিশির বিন্দু নামের প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

 

 

 

এর আগে বেনজীর আহমেদের জব্দ ও অবরুদ্ধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আদালতের আদেশের কপি ও চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

 

 

গত সোমবার দুদকের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ অনুসন্ধান টিম আদেশের কপি পাঠায়। সূত্র জানায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের জব্দ জমি বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে আদালতের আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জমি অন্য কারোর নামে যাতে নামজারি না করা হয় সেজন্য আদালতের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়েছে।

 

 

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ