নতুন পাঁচ মামলায় শিক্ষার্থীরাও আসামি

প্রকাশিত: ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২৪

নতুন পাঁচ মামলায় শিক্ষার্থীরাও আসামি

ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচিকে ঘিরে সারাদেশে সহিংসতায় আরো পাঁচটি মামলায় শিক্ষার্থীদের আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০জন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছে পুলিশ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থী। রাজধানীর রূপনগর থানায় পৃথক দুটি মামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিইউবিটির (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি) অজ্ঞাতনামা ১ হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলার বাদী পুলিশ। অন্য মামলার বাদী নিজেকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একজন ‘সক্রিয় সদস্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতনামা ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে ঢাকার আশুলিয়া থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। এ মামলার বাদী পুলিশ।

শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, কোটা সংস্কারের দাবিতে ১১ জুলাই বিকেলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশ সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। ইটের আঘাতে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা রক্তাক্ত ও জখম হন। এ ছাড়া আরও অনেক পুলিশ সদস্য ইটের আঘাতে আহত হন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিলে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

২১ জুলাই করা এ মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদ আহম্মেদ, আহমেদুল কবির, মো. রায়হান, সৌরভ, শাহরিয়ার, মোহাইমিনুল, আহসান হাবীব, আনাস, সাগর, ইমরান, আহসান হাবীব (১), ওয়াসিউল ইসলাম, মুজাহিদুল ইসলাম, আলতাফ, সেলিম রেজা, নূরু ইসলাম, আসিফ, রিফাত (অ্যাগ্রো ফরেস্টিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ), শাকিব ও মৃদুল।

আসামিদের নামের তালিকায় থাকা তৌহিদ আহম্মেদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থীসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানায় ১৭ জুলাই মামলাটি করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাইয়ুম মিয়া।

 

 

মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা রামদা, লোহার রড, লোহার পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ১৬ জুলাই বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে যায়। হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ছাত্রলীগের পুরোনো ২৭টি বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর, কয়েকটি ল্যাপটপ চুরি ও সনদপত্র পুড়িয়ে ফেলা হয়।

 

 

 

আসামিরা হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন আম্মার, অর্থনীতি বিভাগের তোফায়েল আহমেদ, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ফজলে রাব্বি, আরবি বিভাগের মাহাদী হাসান, পপুলেশন সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের মাহাদী হাসান (মারুফ), সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মেহেদী সজীব, দর্শন বিভাগের আশিকুর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শাহ পরান, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগের দেওয়ান বাঁধন, সিরামিকস অ্যান্ড ভাস্কর্য বিভাগের তানভীর আহম্মেদ, অর্থনীতি বিভাগের মমিনুল হক ও আল মুহি ফেরদৌস, লোকপ্রশাসন বিভাগের আব্দুল্লাহ আল মেহেদি, রসায়ন বিভাগের শাহরিয়ার পলাশ এবং ফার্মেসি বিভাগের মো. আনারুল।

 

 

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মামলার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের নবীন রহমান, একই বিভাগের ৪০তম ব্যাচের মো. মেহেদী ও হিরন এবং অর্থনীতি বিভাগের ৪০তম ব্যাচের সাগরের নাম সহ আরও সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

 

 

 

এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ জুলাই সন্ধ্যা সাতটায় বাদী (এসআই শরীফ) জানতে পারেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে অরাজকতা করতে পারেন। এরপর তিনি অন্য পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে আসেন।

 

 

রাত ১০টার দিকে ‘আন্দোলনকারী অজ্ঞাতনামা বিশৃঙ্খল সৃষ্টিকারী ছাত্রছাত্রীরা’ ভিসির বাসভবনের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। ভিসির বাসভবনের দরজা–জানালা ভাঙচুর ও গাছপালা নষ্ট করেন তাঁরা। একপর্যায়ে ভিসির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদেরও মারধর করেন।

 

 

 

এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, উপাচার্য আন্দোলনকারীদের হাত থেকে বাঁচতে পুলিশের সহায়তা চান। রাত একটার পুলিশের সদস্যরা ভিসির বাসভবনের সামনে যান। তখন ভিসির বাসভবনের পাশের মাঠে ছাত্রলীগের ছাত্রছাত্রীরা অবস্থান নেন। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে যাওয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

 

 

 

পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে আরও অজ্ঞাতনামা ছাত্রছাত্রীদের জড়ো করেন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা উপাচার্যের বাসভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়।

 

 

 

কোটাবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা ভিসির বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠিসোঁটা দিয়ে মারতে শুরু করেন। ছাত্রছাত্রীদের লাঠির আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন।

 

 

 

এজাহারের বিবরণ অনুযায়ী, ঘটনার এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করা হয় এবং আন্দোলনকারীদের হাত থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য শটগান থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়েন পুলিশ সদস্যরা। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। পরে আবার সংগঠিত হয়ে দফায় দফায় ভিসির বাসভবন ও পুলিশের ওপর পেট্রলবোমা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়।

 

বিইউবিটির ৫০০ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর নামে দুই মামলা রাজধানীর রূপনগর থানায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিইউবিটির (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি) অজ্ঞাত ৫০০ ছাত্রের বিরুদ্ধে ১৭ জুলাই করা পৃথক দুই মামলার একটির বাদী পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন মিয়া।

 

 

 

এ মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রূপনগরের শিয়ালবাড়ী সড়কে বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০ থেকে ৫০০ জন ছাত্র জড়ো হন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কটূক্তিমূলক স্লোগান দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করে। তখন সেখানে এক থেকে দেড় হাজার বহিরাগত লোক (অজ্ঞাতনামা) এসে স্লোগান দেয় এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখে।

 

 

সড়ক অবরোধ করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেখানে আসেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়।

 

 

এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে চারটার (১৬ জুলাই) দিকে সেদিনের মতো আন্দোলন স্থগিত করে চলে যাওয়ার জন্য পুলিশের সহযোগিতার কথা বললে অজ্ঞাতনামা বহিরাগতদের মধ্য থেকে হঠাৎ ‘ভুয়া ভুয়া’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে তাঁরা লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেন। এতে পুলিশের এসআই আল মামুন, সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন গুরুতর জখম হন।

 

 

 

বিইউবিটির অজ্ঞাতনামা ছাত্রদের বিরুদ্ধে রূপনগর থানায় অপর মামলাটি করেছেন যুবলীগের ‘সক্রিয় সদস্য’ সুমন চৌধুরী। তিনি মামলায় উল্লেখ করেছেন, যেকোনো ধরনের নাশকতা বন্ধ, জনগণের সম্পদ ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে তিনিসহ রূপনগর থানা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিইউবিটি ক্যাম্পাসের উল্টো দিকের রাস্তায় আসেন।

 

 

তাঁরা এসে দেখতে পান বিইউবিটি ক্যাম্পাসের উল্টো দিকের রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন ৪০০ থেকে ৫০০ ছাত্র। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সেখানে ৭০০ থেকে ৮০০ জন বহিরাগত জড়ো হন। এজাহারে বহিরাগতদের জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাদী।

 

 

 

এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, বিইউবিটির অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থী এবং বহিরাগতরা সেদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে বাদীসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় রুমা নামের এক নারীর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এ ছাড়া কয়েকজন নারী কর্মী তখন শ্লীলতাহানির শিকার হন বলেও এজাহারে অভিযোগ করা হয়।

 

 

 

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এই ৫টি মামলার বাইরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীর শাহবাগ থানায় (১২-২১ জুলাইয়ের মধ্যে) ১১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মামলার বাদী পুলিশ। ২টি মামলার বাদী ছাত্রলীগের দুই নেতা। এসব মামলায় অজ্ঞাত আন্দোলনকারীদের আসামি করা হয়েছে।

 

 

 

তিনি বলেন, আন্দোলন করার কারণে কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হবে না। যারা সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, সে ব্যাপারে মামলা হবে।

 

 

 

এর আগে গত রোববার কোটা সংস্কার নিয়ে আদালতের রায়ের পর সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা হলে সেগুলো সরকার দেখবে। তিনিসহ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও এবিষয়ে বলে আসছেন যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, সহিংসতা বা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়নি।

 

 

সহিংসতার ঘটনাগুলোর জন্য বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে আসছেন সরকারের মন্ত্রীরা। তারা আবার শিক্ষার্থিীদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের উপর নির্যাতনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন।

 

 

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ