হবিগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘাত, ১ মাসে সংঘর্ষে নিহত ৮

প্রকাশিত: ৬:২৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

হবিগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘাত, ১ মাসে সংঘর্ষে নিহত ৮

ডায়ালসিলেট ডেস্ত:হবিগঞ্জের মিরপুর বাজারে গত ২৭ আগস্ট দুই যুবকের কথা কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষে জড়ায় দুদল গ্রামবাসী। একে একে সংঘর্ষে যোগ দেয় ২০ গ্রামের মানুষ। পুরো মিরপুর বাজার পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। আহত হয় উভয়পক্ষের অন্তত তিন শতাধিক মানুষ।স্থানীয়দের অভিযোগ, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ জোরালো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুই দফায় ৯ ঘণ্টার বেশি চলে এই সংঘর্ষ।বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন বলেন, ‘দুই যুবকের কথা কাটাকাটি নিয়ে সন্ধ্যায় সংঘর্ষ শুরু হয়, চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। পরদিন আবার বেলা ১১টায় শুরু হয়ে চলে ২টা পর্যন্ত। পুলিশ দুইবার সংঘর্ষ থামাতে আসছে, তবে তাদের তেমন জোরালো ভূমিকা ছিল না। যে কারণে এত দীর্ঘ সময় সংঘর্ষ হয়। অনেক হতাহত ছাড়াও বেশ কিছু দোকানপাট ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।’এদিকে, গত ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে নবীগঞ্জের মোস্তফাপুরে। এতে নিহত হন মন মিয়া নামে এক বৃদ্ধ। আহত হয় নারী-পুরুষসহ অন্তত ৩০ জন। এখানেও স্থানীয়দের অভিযোগ- সংঘর্ষের খবর দিলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় অন্তত চার ঘণ্টা পর।

এ ছাড়া বাহুবল উপজেলা সদরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা পার্কিং নিয়ে ১ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষে জড়ায় শ্রমিকদের দুপক্ষ। আহত হয় অন্তত ৩০ জন।

একই দিনে আজমিরীগঞ্জের জলসুখায় ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয় শতাধিক লোক। ৯ সেপ্টেম্বর একই উপজেলার শিবপাশায় শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত হয় অর্ধশতাধিক।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জেলায় হঠাৎ বেড়ে গেছে এমন সংঘাত। নিয়মিতই জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘটছে ছোট বড় সংঘর্ষের ঘটনা। যার সূত্রপাত হয় মূলত ফেসবুক স্ট্যাটাস, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি আর আধিপত্য বিস্তারের মতো ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে জেলায় সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন অন্তত আটজন। এ ছাড়া মরদেহ উদ্ধার হয়েছে আরও দুটি। আর এসব সংঘর্ষে আহতের সংখ্যা হাজারের বেশি।

আজমিরীগঞ্জে স্কুলশিক্ষক অলিউর মিয়া বলেন, ‘আপনি দেখবেন, যতগুলো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সবগুলোই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কিংবা পূর্ববিরোধ নিয়ে। যাদের একটু প্রভাব বেশি, তারা মনে করে এখন পুলিশ খুব বেশি তৎপর নয়, তাই এই সুযোগে আগের প্রতিশোধ নিতে হবে। আর এভাবেই সংঘর্ষের শুরু হয়।’

সচেতন মহল বলছেন, পুলিশের জড়তা কাটানোর পাশাপাশি মনোবল বৃদ্ধি করা না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সহজ হবে না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, ‘প্রথমত হচ্ছে- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগেই দলীয়করণের প্রভাবে পুলিশ তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে ফেলেছে। যে কারণে এখন তারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে এবং পুলিশের ওপর থেকে মানুষেরও আস্থার জায়গাটা চলে গেছে। পুলিশ যখন নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়, তখন তাদের দ্বারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। এখন তাদেরকে পুনর্গঠন করে মনোবল শক্ত করতে হবে। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তা হলে এই পুলিশ দিয়ে এ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা আর কোনোভাবেই সম্ভব না।’

‘দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আগে পুলিশ কোনো সংঘর্ষের খবর পেলে দ্রুত ফোর্স নিয়ে ছুটে যেত। এখন পুলিশ যেতে আগ্রহী নয়। তাদের ধারণা, জনগণ হয়তো তাদের ওপরও আক্রমণ করতে পারে। আর মানুষের মধ্যে একটা ভাব এসেছে যে, পুলিশ এখন আসবে না। যে কারণে আগে মারামারির যে ভয় ছিল, এখন আর সেই ভয় তারা পায় না।’

তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে মূল কাজ হচ্ছে, পুলিশকে জনগণের বন্ধু হিসেবে গড়ে তোলা এবং পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনা। তা না হলে এই দেশের আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক হবে বলে আমি মনে করি না।’

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল হক খান বলেন, ‘আমি দাঙ্গাপ্রবণ এলাকা বলব না। আমি এসে যেটা বুঝতে পারছি এই এলাকার মানুষ সহজ-সরল এবং খুব আবেগি। তাদের আবেগকে ভালো কাজে লাগাতে হবে। তাদেরকে সচেতন করতে হবে এবং দাঙ্গার ক্ষতিকর দিক বোঝাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হবে না। এটা কিছু থাকবেই। আমরা দাঙ্গার ক্ষতিকর দিক বুঝিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। আশা করি, সবাই সহযোগিতা করবেন।’

0Shares