প্রকাশিত: ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
ডায়ালসিলেট রিপোর্ট :: বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এবং আওয়ামী লীগ ও তার দোসর রাজনৈতিক দল ছাড়া এ বৈঠকে অংশ নিয়েছে সব রাজনৈতিক দল। বৈঠক থেকে দলগুলোর নেতারা বার্তা দিয়েছেন, দলীয় আদর্শ ভিন্ন হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ। দল-মতের ওপরে উঠে বাংলাদেশ প্রশ্নে কোনো আপস হবে না। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ, আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলায় নেতৃবৃন্দরা বৈঠক থেকে নিন্দা জানানো হয় ।
জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে কোনো কাউন্সিল করার সুযোগ আছে কিনা তা ভেবে দেখতে সরকারকে পরামর্শ দেয়া হয়। সভার মূল সুর ছিল, মত-পথ-আদর্শের ভিন্নতা থাকবে, রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবে, অবস্থার ভিন্নতা থাকবে, কিন্তু দেশ ও সার্বভৌমত্ব এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে সবাই এক্যবদ্ধ।
এছাড়াও ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সব দল ও পক্ষকে নিয়ে কোনো সমাবেশ করা যায় কি না সে বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে হওয়া ভারতের সঙ্গে সব চুক্তি প্রকাশ্যে আনায় এবং ভারতের সাথে রামপালসহ ক্ষতিকর সব চুক্তি বাতিল করায় এসব বিষয়ও উঠে। দেশের বিরুদ্ধে চলমান অপপ্রচারের বিরুদ্ধে পিআর সেল করার প্রস্তাব করা হয়।
বিএনপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে নির্বাচনী রোডম্যাপের। একই সঙ্গে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা উপদেষ্টা পরিষদ, বিদেশি মিশন ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের বাদ দেয়ার দাবি তোলেন।এদের কারণে শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। সরকারপ্রধান দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিকাল ৩টা থেকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ৪টা ১০ মিনিটে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রবেশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর শুরু হয় বৈঠক।
দীর্ঘ বৈঠকের শুরুতে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, সবাই মিলে আমরা একজোট হয়ে যেন কাজটা করতে পারি। সবাই একত্র হয়ে বললে একটা সমবেত শক্তি তৈরি হয়, এই সমবেত শক্তির জন্যই আপনাদের সঙ্গে বসা। ড. ইউনূস বলেন, আমরা কেন জানি মানুষের ক্রোধ থেকে মুক্ত হতে পারছি না। বিজয়ের মাসে আরও বেশি করে আনন্দ করার কথা আমাদের। কিন্তু আমাদের এই স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না। ৫ই আগস্টের পর থেকে কী হয়েছে, বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা তা দেখেছেন। আমরা এই পরিস্থিতিতে মনে করেছিলাম দুর্গাপূজা নিয়ে একটা হাঙ্গামা শুরু হবে। সেখানে আপনারা সবাই ঐক্যের মধ্যে শরিক হয়েছিলেন। সারা দেশ জুড়ে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা পালিত হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। সেটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। দেশকে নতুন করে অস্থির করার চেষ্টা চলছে। এখন যে চেষ্টা চলছে সেখানে বিশেষভাবে আমরা আপনাদের চাচ্ছি।
বহির্বিশ্বের মিডিয়া নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমরা বারবার তাদের বলছি যে, আপনারা আসেন এখানে, দেখেন, এখানে কোনো বাধা নেই। কিন্তু না, তারা ওখান থেকেই কল্পকাহিনী বানিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে যে, আমরা এক, আমরা যেটা পেয়েছি সেটা একজোট হয়ে পেয়েছি, কোনো মতবাদের কারণে পাইনি, ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি, যারা আমাদের ওপর চেপে ছিল, তাদের উপড়ে ফেলেছি।
এটাই সবার সামনে তুলে ধরতে হবে, সবাই মিলে যেন এটা করতে পারি। আমাদের নতুন বাংলাদেশের যাত্রাপথে এটা মস্ত বড় একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যে যত ষড়যন্ত্র করুক, যত অপ-প্রচার করুক, তারা এটা আমাদের থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। কারণ আমাদের রক্ত এখনো শুকায় নাই। দেয়ালের লেখা এখনো মুছে যায় নাই, দগদগ করছে এখনো। আমাদের হৃদয়ের ক্ষতও দগদগ করছে। আমরা সেই শক্তিমান জাতি, আমরা লড়াই করবো। যে হাস্যকর প্রচেষ্টাগুলো হচ্ছে, সেটা তুলে ধরার জন্য আপনাদের আহ্বান জানিয়েছি। আপনারা সুন্দরভাবে সেগুলো তুলে ধরেছেন। আমাদের নানা মত থাকবেই, কিন্তু এই বিষয়ে কোনো মতভেদ আমাদের নাই।
বৈঠকে সরকারের তিন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন। আর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, প্রফেসর ডা. এ জেডএম জাহিদ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর প্রফেসর মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম, ন্যাশনাল পিপল্স পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন,
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির শহীদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হক লালা, জাতীয় জোটের এহসানুল হুদা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম,
বিকল্প ধারা বাংলাদেশের (একাংশ) নুরুল আমিন ব্যাপারী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আবদুল বাসিত আজাদ ও জাহাঙ্গীর হোসেন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের আবদুর রব ইউসুফী ও মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, এনপিপি’র ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ এলডিপি’র মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মুফতি ফখরুল ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের (ফারুক) সদস্যসচিব ফারুক হাসান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম’র ববি হাজ্জাজ, এনডিপি’র আবু তাহের প্রমুখ।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech