প্রকাশিত: ১১:৪৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫
ডায়াল সিলেট ডেস্ক ::জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সেলিব্রেটি হলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা।
এতে বক্তব্য রাখেন—ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রোকন উদ্দিন, মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, লে. কমান্ডার (অব.) মেহেদী হাসান, গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) মো. খালেদ হোসাইন, ক্যাপ্টেন (অব.) শুভ আফ্রিদি প্রমুখ। এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, আমাদের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পরিবারগুলোতে ১ কোটির বেশি ভোটার রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে এই ১ কোটি ভোটার আমাদের রিজার্ভ হিসাবে থাকবে। ইতোমধ্যেই আমরা জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে এই বিষয়ে একমত হয়েছি। বিএনপিরও অনেকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে আন্দোলন-লড়াই করেছিলাম। আগামীর ব্যালট পেপার সামনে রেখে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং লড়াই করতে হবে।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে। আমরা ছাত্র সংগঠনগুলোকে বলব—আপনারা ধীরে চলুন। না হলে আপনাদের অবস্থা ছাত্রলীগের মতো হবে। কারণ বাংলাদেশে আর সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম চলবে না।
তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল, খুনিদের সহযোগী ছিল, বিভিন্নভাবে খুনিদের সহযোগিতা করছে—তারা কেউ যদি যুক্ত হতে চায়—তাদের ঠেকিয়ে দিতে হবে। কারণ খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এর বাইরে বিকল্প পথ তাদের আর নেই। যাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ নেই—তাদের একটি নিয়মের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তারা যদি ক্ষমা প্রার্থনা না করে তাহলে তাদের বাংলাদেশে জায়গা হবে না।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আপনাদের ওয়ার্ডে, উপজেলা, জেলায় দায়িত্ব নিতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে নীতি, নিষ্ঠা এবং দেশপ্রেমকে সামনে রেখে নিজেদের জায়গায় ফিরে গিয়ে একেকজন চেয়ারম্যান হয়ে উঠুন। একজন মেয়র, কাউন্সিলর এবং একজন এমপি-মন্ত্রী হয়ে উঠুন। আজ থেকে নিজের এলাকায় গিয়ে যার যতটুকু মনে হয়, যতটুকু কর্মেযজ্ঞে কাজ করতে পারবেন, ততটুকু কাজ করুন। আপনাদের রায় দিতে এবং বাংলাদেশের মানুষকে এই রায় জানিয়ে ছড়িয়ে পড়তে হবে। আপনারা একসঙ্গে গলা উঁচু করে রায় দিন।
তিনি সাবেক সেনা কর্মতর্কাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কি এই বাংলাদেশে সন্ত্রাসী এবং দখলদারিত্ব সমর্থন করবেন? আপনারা কি আর ক্ষমতার অপব্যবহার সমর্থন করবেন? আপনারা কি আর ঘুসকে সমর্থন করবেন? আপনারা কি সুপারিশের মাধ্যমে অযোগ্য মানুষের চাকরিকে সমর্থন করবেন? সবাই এক বাক্যে বলেন না।
তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে এতদিন যে বিষয়গুলো দিয়ে নির্যাতন ও জুলুমের শিকার হয়েছি, আমরা সেগুলো আর করতে দেব না। একটা জিনিস মনে রাখবেন, খুনি শেখ হাসিনা একা গিয়েছে। কিন্তু তার যে চর্চা ১৬ বছরে তার সিস্টেমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ গিয়েছে, অনেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই সিস্টেমগুলো জারি রাখতে চায়। আমরা দেখছি বিভিন্নভাবে এই সিস্টেমগুলো মানুষের মাঝে আসছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এই সিস্টেমগুলো প্রতিহত করতে হবে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সারজিস আলম বলেন, এতদিন আপনারা বলেছেন অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দেইনি। এখন আপনাদের সময় এসেছে, সেই ট্রেনিংকে দেশ ও মানুষের জন্য কাজে লাগান। যে জায়গায় আপনারা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে দেখবেন, বিভিন্ন মানুষের নোংরা রাজনীতি করতে দেখবেন, সেই জায়গায় ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করবেন।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজপথে কোটি মানুষ ছিল। কিন্তু আন্দোলন যেদিন শুরু হয় সেদিন রাজপথে এক হাজার মানুষ ছিল না। সেদিন কয়েকশ মানুষ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল। আপনাদের সামনে যখন ন্যায়-নীতি থাকবে, দেশপ্রেম থাকবে, তখন সততার সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাবেন—তখন শত মানুষ থেকে হাজারো মানুষ, হাজার থেকে লাখ এবং লাখ থেকে কোটি মানুষ হবে।
তিনি বলেন, এই অভ্যুত্থানে আমাদের বোনেরা, নারীরা রাজপথে আমাদের সামনে থেকে এই লড়াইটাকে নিজেরা একটি অবেদ্য দেওয়াল তৈরি করেছিলেন। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যদি আমাদের সঙ্গে দাঁড়ান আগামীর বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে অবেদ্য দুর্গে পরিণত হবে। আমরা আপনাদের অনুরোধ করি, আগামীর বাংলাদেশে আপনারা দেশপ্রেমকে সামনে রেখে, সততাকে সামনে রেখে জনগণ ও দেশের সেবা করার জন্য ভোটের রাজনীতিতে আসুন। শুধু ভোটের নয়, এই রাজনীতি যেন জনগণের রাজনীতি হয়।
তিনি সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আরও বলেন, আমরা যে রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছি এখানে কোনো পরিবারতন্ত্র থাকবে না। বাপ নেতা হলে ছেলে নেতা হবে এই ট্র্যাডিশন থাকবে না। আপনি যোগ্য হলে আমরা চেয়ার ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকব। আপনি আমাদের যৌক্তিক সমালোচনা করলে সেটি মেনে নেব। কেউ সমালোচনা করলে সে আমার প্রতিপক্ষ সেটা মনে করব না। এই মাইনাসের রাজনীতি আগামীর বাংলাদেশে আর থাকবে না। আমরা আমাদের ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠীস্বার্থ একপাশে রেখে জনগণ এবং দেশের স্বার্থ সামনে রেখে কাজ করলে আগামীর বাংলাদেশে কেউ আমাদের রুখতে পারবে না।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech