যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে – আহবায়ক মাহবুবুল হক, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার – ত্যাগী নেতাদের দাবি

প্রকাশিত: ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২৫

যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে – আহবায়ক মাহবুবুল হক, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার – ত্যাগী নেতাদের দাবি

সিলেটে মহানগর সেচ্ছাসেবকদলের শাহপরান ও বিমানবন্দর থানা

কমিটি নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে তুমুল উত্তেজনা

সোহেল আহমদ :: কমিটি গঠনে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ এনে জাতীয়তাবাদী সেচ্ছাসেবকদল সিলেট মহানগর অন্তর্গত ৬টি থানায় পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে প্রত্যাখান করেছে পদ না পাওয়া দলের একাংশের নেতারা।

গত মঙ্গলবার রাতে সিলেট মহানগর সেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব আফছর খানের স্বাক্ষরিত পত্রে ৬টি থানায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।  এরই জের ধরে সিলেটজুড়ে সেচ্ছাসেবক দলে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

দলে পদ বঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা কমিটি ঘোষণার পরদিন বুধবার বিকেলে নগরীতে  ঝাড়ু নিয়ে মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় নেতা-কর্মীদের কমিটি বিরোধী স্লোগান দিতেও দেখা যায়। পরে সেখানে  কমিটির গঠনে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ করে শ্লোগান দেয়া হয়।

মূলত ঘটনাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে পদ থেকে বাদ পড়েছেন বেশ কয়েকজন নেতারা।

তাদের অভিযোগ, কমিটিতে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করে ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগের দোসরদের এ পদে বসানো হয়েছে। গত ৫ আগষ্টে এই আওয়ামীলীগ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার  নীরিহ মানুষদেরকে হত্যা করে। পরে দেশের আপামর জনতার রোষানলে পড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আবার সেই দ্যোসরদের ছায়ায় সেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কমিটিতে স্থান দিয়ে আবারো মাথাচড়া দিয়ে দাড়ানোর প্রচেষ্টা চালানো চেষ্টা করছেন  বলে অভিযোগ উঠে সেচ্ছাসেবকদলের শীর্ষ নেতাদের উপর। তাই এই অন্যায় হতে দেয়া যাবে না।

বর্তমান কমিটি সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক ও সদস্য সচিব  তাদের ক্ষমতা ভারী করার উদ্দেশ্যে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদেরকে বেচে নিয়েছেন বলে এমন বক্তব্য ছুড়ে ফেলেন পদ না পাওয়া এক নেতা। ঐদিন রাতে ফেসবুক লাইভে এসে বিভিন্ন ধরনের অশুভ আচরণ করে আহবায়ক কমিটির দ্বায়িত্বে থাকা নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে কমিটি নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা করতে দেখা যায়। এতে দলের অনেক সিনিয়র নেতারা বিষয়টি চোখে পড়ে অনেকে খারাপ দৃষ্টিতে এর সমালোচনা করেন।

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সেচ্ছাসেবকদল নেতারা ডায়ালসিলেটকে জানান,দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িতে থাকা অবস্থায় সেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক ও সদস্য সচিব কোন যাছাই-বাছাই না করে কিভাবে আমাদেরকে পদ থেকে বাদ দিলেন এবং সেখানে আওয়ামীলীগ যুবলীগ সেচ্ছাসেবকলীগ এবং ছাত্রলীগ  নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকা সুবিধাভোগীদের ঠাই দিয়ে তাদেরকে আবারো দ্বায়িত্ব প্রদান করা হলো তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।

এদিকে, বিক্ষোভকারীদের এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট মহানগর সেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী ডায়ালসিলেটকে জানান, যারা কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন বিষয়াদী ও ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনে এবং বিএনপি চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এখন যারা বিরোধীতা করছেন তাদের অনেককে গত ৫ আগষ্টের আগে কখনও আন্দোলন সংগ্রামে পাওয়া যায়নি এমনকি দলের দুর্দিনে কোন মিছিল মিডিংয়ে পাওয়া যায়নি।

গত ৫ আগষ্টের আগে রাজপথে নেতাকর্মীরা যে পরিমাণ মাঠে উপস্থিতি ছিল আর এখনকার সময়ে  নেতাকর্মীদের উপস্থিতি সংখ্যা প্রায় ৫গুণ বেশী। তবে এবারের কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। দলের দুর্দিনে বাদ পড়া কয়েকজন কর্মী যারা ৫ আগষ্টের আগে ও পরে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল সেই  ত্যাগী নেতাদের দলের কমিটিতে স্থান না দেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে মাহবুবুল হক ডায়ালসিলেটকে জানান, সিলেট বিএনপি দ্বায়িত্বশীল শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পরামর্শে ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে একটি সুষ্ট ও সুন্দর কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারপরও এখানে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরা রয়েছেন যারা এ কমিটিতে স্থান পাননি, আগামীতে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে।

যেহেতু এখনও আমাদের  মহানগর এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠনের বাকি রয়েছে । সেগুলোতে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে। আর তাদেরতো কিছু প্রত্যাশা থাকতেও পারে কেননা বিগত সময়ে অনেকে বিভিন্ন হামলা-মামলায় জেলও খেটেছেন। এ কমিটিতে সবাইকে তো একই পোষ্ট দেয়া সম্ভব না তাই পরবর্তীতে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে। আমরা চাই বাংলাদেশ একটি রুল মডেল হিসেবে গড়ে উঠুক এটা আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

এদিকে,  চিনি সিন্ডিকেট ও টেন্ডাবাজিতে সেচ্ছাসেবকদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যুক্ত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুল চৌধুরী বলেন, এ বিষয় সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। তবে এ ধরণের কিছু হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

একটি সুত্র জানায়, বিগত দিনে আওয়ামীলীগ সরকার থাকাকালীন সময়ে  সেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে নবগঠিত থানা কমিটির শীর্ষ দ্বায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজনের ছবি ফেসবুক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয় ।মূলত সে বিষয়টাকে কেন্দ্র করে সিলেটে নতুন করে সমালোচনার ঝড় উঠে।  বিশেষ করে বিমানবন্দর থানা ও শাহপরান থানার কমিটিকে ঘীরে ব্যাপক সমালোচনার দেখা দেয়।

এবিষয়ে সিলেট মহানগর সেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম আহবায়ক রুনু আহমদ ডায়ালসিলেটকে জানান,এবারের সিলেট কোতোয়ালী থানা পর্যায়ে কমিটি গঠনের সময় প্রায় ৫‘শ সিভি জমা হয় । সেগুলো যাচাই-বাচাই করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে  সিলেটে বেশীর ভাগ ত্যাগী নেতারা বাদ পড়েন একমাত্র  গ্রুপিং রাজনীতির কারণে। সে বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করছি যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রহন করা হয়।

শাহপরান থানার আহবায়ক কমিটি নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা আসলে দুখজনক। বিগত সময়ে নবাগত আহবায়ক নূরুল হক মাছুম, দলের  দুসময়ে রাজপথে তখন বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে তার নেতৃত্বে বিভিন্ন মিছিল ও সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো । গত জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নুরুলের পায়ে গুলি লাগে এবং গুরুত্বর আহত হন। সেই দিক বিবেচনা করে দল তাকে  মূল্যায়ন করেছে।

এবিষয়ে সিলেট মহানগর সেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য মেহেদী হাসান চৌধুরী সপু ডায়ালসিলেট জানান, আমার ২৯ বছরের রাজনীতিতে দলের একজন নিবেদিত প্রাণ হিসেবে আওয়ামীলীগ ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। ২০০১ সাল থেকে আমি এক্টিভলি রাজনীতি শুরু করি এখন অবদি আছি। ২০১৭ সালে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মামলার স্বীকার হয়ে ২৪ দিন  কারাবরণ করি । এর আগে একই কারণে  ২০১৬ সালে আমার এলাকায় বসবাসরত আওমীলীগ ও তাদের অঙ্গসহযোগি সংগঠনের সন্ত্রাসীরা ক্ষমতায় থাকাবস্থায় আমার বসত- বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিমাদ আহমদ রুবেল এবং সিলেট মহানগর সেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি  আফতাব হোসেন খান ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে  তাদের ইন্ধনে তৎকালীন পুলিশ অফিসার ইয়াসিনকে  সাথে নিয়ে হামলা চালায়। এসময় ৯ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। প্রথমে আমার মায়ের হাতে গুলি করে পরে  আমার ভাইকে হত্যার উদ্দ্যেশে আরো ৮ রাউন্ড গুলি করে এসময় তার প্রাণ রক্ষার্থে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

এরপর আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করা হয় । পরে ২০২০ সাল পর্যন্ত আইনী লড়াই শেষে মামলা থেকে খালাস পাই।

ঢাকায় মোট ৩টি সমাবেশে আমি সহ আমার কর্মীদের নিয়ে সমাবেশে যোগদান করি। ২০২১ সালে মহানগর সেচ্ছাসেবকদলে প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে আমাকে সবার শেষে ৬১নং সদস্য তালিকায় রাখা হয়। পরে সেই কমিটি বিলুপ্ত হয়ে গেলে আবারো সিলেট মহানগর সেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক কমিটির ২৭নং সদস্য হিসেবে স্থান পাই।

গত ২০২৩ সালে যখন ৪, ৫ এবং  ৬ নং ওয়ার্ড কমিটি আমার দ্বায়িত্বে দেয়া হয়।  সে মূহুর্তে ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটির গঠন করার সময় কাউকেই খুজে পাওয়া যায়নি আর  এখন দলের  নেতাকর্মীদের পদ-পদবীর জন্য হাজার হাজার নেতা বেরিয়ে এসেছেন পদ পদবীর দ্বায়িত্বভার নিতে।

আমার আশা ছিলো দলের জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করেছি অন্তত দল আমাকে এই মুল্যায়নটা দিবে অবশেষে আরেকটি মহল ক্ষমতার ঠিকে রাখার জন্য আমাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার বানানো হলো। আমি দলকে ভালোবাসি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলের জন্য কাজ করে যাবো।

এদিকে বিমানবন্দর থানার নব নির্বাচিত আহবায়ক রাশেদুজ্জামান রাশেদ ২০২৩সালের ১০ই মার্চ তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন,হুবুহু তুলে ধরা হলো- যদিও বর্তমানে রাজনীতির সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই তবুও মাঝে মধ্যে অনেকের সাথেইরাজনৈতিক কথাবার্তা হয়। সেই হিসেবে বর্তমান সময়ের তুখোর কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক ভাই ব্রাদারের সাথে লেনদেন ছাগা বাজি ছিলো।যার ফলাফল আমি বাজিতে জিতে গেলাম।

২০২৩ সালের ২১শে জুন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, অভিনন্দন  আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ভাই নবনির্বাচিত মেয়র,  সিটি করপোরেশন ।

২০২৩ সালের ২১জুনের ভোটের ফলাফল : খাসদবি প্রাথমিক বিদ্যালয় সেন্টার নৌকা – ৭৬৫  লাঙ্গল – ৩৮৪।

এর আগে তিনি  ২০১৯ বলেছিলেন আর কোনদিন রাজনীতি করবেন না তখন ছিলো ২০১৮ নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগ অবৈধ সরকারের গঠন। আর বর্তমান দেশের পরিস্থিতি পাল্টানোর সাথে সাথে সেই বাক্যের রচনাটাও  উধাও হয়ে গেল। রাশেদ আওয়ামীলীগের নেতা মিসবাহ সিরাজ, নাদেল এবং তোফায়েলসহ বেশ কয়েকজনের  ছত্রছায়ায় নৌকার পক্ষে সমর্থনে বিগত দিনে কাজ করে গেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি কিভাবে দেখছেন তা এখন সময়ের অপক্ষায়।

উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি থেকে সিলেট মহানগর আওতাধীন ৬টি মডেল থানায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের আহ্বান করা হয়েছে। এর পর থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত জমা দেন এবং সেগুলো যাচাই-বাচাই শেষে গতকাল মঙ্গলবার সিলেট মহানগর অন্তর্গত ৬টি থানা শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়।

অন্যদিকে দলে ত্যাগীদের সঠিক মূল্যায়ন  না হওয়ার একটি মাত্র কারণ সিলেটের বিএনপি শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রতিহিংসার রাজনীতি। তারা এক পক্ষ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তার পছন্দের কর্মীকে বেছে নেন। আবার অন্যপক্ষ সেটোকে প্রত্যাখান করে তার নিজের মানুষকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করে। এতে শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় না থাকলে আপনি মনে করতে হবে আপনার মত ত্যাগী নেতাদের কোনদিনই পদের স্থানটি পাবেন না।

যতদিন পর্যন্ত সিলেট বিএনপির দু এক না হবে ততদিন ত্যাগীদের দলে বলির শিকার হতে হবে।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ