প্রকাশিত: ৪:২৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফের সঙ্গে ঘনিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সাবেক ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ মেঘনা আলম। তার দাবি, তিনি ঈসাকে বিয়ে করেছেন। তবে মেঘনা ঈসার সন্তান নষ্ট করে ফেলেছেন বলে ঈসা যে অভিযোগ করেছেন সেটি সঠিক নয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাসুম মিয়ার আদালতে তোলা হলে বিচারকের অনুমতি নিয়ে এ কথা বলেন মেঘনা।
মেঘনা বলেন, সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। ঈসা অভিযোগ করেন, আমি নাকি তার বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেছি। এটা মোটেও সত্য না।
মেঘনার দাবি, তিনি কেবল সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলানের সঙ্গেই তার প্রেমের সম্পর্ক, অন্য কারো সঙ্গে নয়।
সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রেমের ফাঁদে ফেলার অভিযোগে ধানমণ্ডি থানায় দায়ের করা প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য মেঘনাকে এদিন আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ বুধবার মেঘনাকে এ মামলায় গ্রেফতার এবং তার ‘সহযোগী’ সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামের জনশক্তি রপ্তানিকারক কোম্পানির মালিক দেওয়ান সমিরকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। সেই শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার সকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী এ মামলায় মেঘনাকে গ্রেফতার দেখানোর পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি শুনানিতে বলেন, এই আসামিরা অভিনব কৌশল অবলম্বন করে বিদেশি রাষ্ট্রদূতসহ অ্যাম্বাসিগুলোতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের হানি ট্র্যাপে ফেলে বিপুল অর্থ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য চক্র দাঁড় করিয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতারণা করে আসছেন। সবশেষ সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। এবং তার কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ সময় মেঘনা আলমকে তিনি মেঘলা আলম সম্বোধন করেন। শুনানির একপর্যায়ে মেঘনা তার নাম সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে বলেন।
এরপর বিচারক আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী আছেন কিনা জানতে চান। মেঘনা আদালতকে বলেন, কোনো আইনজীবী নেই। তিনি নিজেই কথা বলতে চান।
আদালত অনুমতি দিলে মেঘনা বলেন, আমার নাম মেঘনা, মেঘলা নয়। সৌদি রাষ্ট্রদূতের কথা বলা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন যে কেউ চাইলেই কি সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করতে পারেন? আপনারা কি তার কাছে যেতে পারবেন?
বিচারক তাকে থামিয়ে দিয়ে মামলা সম্পর্কে কিছু বলার আছে কিনা জানতে চান।
এরপর মেঘনা বলেন, আমাকে বিনা বিচারে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে কোনো আইনজীবী পাবেন না। বিষয়টি হচ্ছে রাষ্ট্রদূত ঈসার সঙ্গে আমার একমাত্র সম্পর্ক, আর কারো সঙ্গে না।
তিনি দাবি করে বলেন, সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। ঈসা অভিযোগ করেন, আমি নাকি তার বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেছি। এটা মোটেও সত্য না। এ বিষয়ে আমি ঈসার সঙ্গে কথা বলি। তাকে এসব তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলি। এসব বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি শফিকুরের সঙ্গে কথা বলি। এরপরেই পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে।
মেঘনার পর আদালতে কথা বলেন সমির। দেওয়ান সমির রিমান্ড শুনানিতে আদালতকে বলেন, আমাকে মেঘনা আলমের বয়ফ্রেন্ড বলা হচ্ছে। এটা ভুল তথ্য, তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি সাধারণ একজন মানুষ। দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। আমি একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। আমি মামলার এসব ঘটনার কিছুই জানি না৷
পরে আদালত তাদের দুজনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন। সেই সঙ্গে সমির দেওয়ানকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় মেঘনা আলম সাংবাদিকদের দেখে বলতে থাকেন, একমাত্র ঈসার সঙ্গে আমার সম্পর্ক, আর কারো সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আমি ন্যায়বিচার পাচ্ছি না।
এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরে হাজতখানায় নিয়ে যান।মডেল ও মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটকের আগে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে বাসার ‘দরজা ভেঙে পুলিশ পরিচয়ধারীরা’ ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তাকে আটক করার পরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়। ১২ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা ওই লাইভ এরপর তার আইডি থেকে ডিলিট হয়ে যায়। তবে এর আগেই ফেসবুকে তা ছড়িয়ে পড়ে।
পরদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক এ মিস আর্থ বাংলাদেশকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে উপস্থাপন করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ডিবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনাকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেন।
মডেল মেঘনাকে আটকের প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ১২ এপ্রিল ডিএমপির ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে মডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং তাকে মুক্তির কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
তাকে যে প্রক্রিয়ায় বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে তা অসাংবিধানিক ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি কেন নয়–তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়।
প্রতারণা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মেঘনা আলম ও দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২/৩ জন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে কৌশলে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছে। দেওয়ান সমির কাওয়াই গ্রুপ (KAWAII Group) নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের ফার্মের মালিক। এছাড়া ইতোপূর্বে মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল তার। সুন্দরী, আকর্ষণীয় ও স্মার্ট মেয়েদের তার প্রতিষ্ঠানে ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে সহজে যাতায়াত নিশ্চিত করা এবং দেওয়ান সমির তার ম্যানপাওয়ার ও অন্যান্য ব্যবসাকে অধিকতর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে চক্রান্তের অংশ হিসেবে অসৎ উদ্দেশ্যে তার সহযোগী আসামিদের সহায়তায় ও অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কূটনীতিককে টার্গেট করে ব্লাকমেইল করে বড় অঙ্কের টাকা চাঁদা হিসেবে দাবি করে এবং আদায় করে থাকে।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech