প্রকাশিত: ১১:২৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি ভারত, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে। মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (আইসিই) ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের যৌথ এক অভিযানে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এআইএলএ–এর ‘দ্য স্কোপ অব ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশনস অ্যাগেইনস্ট ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ ভারতের, ১৪ শতাংশ চীনের। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল ও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীও এই তালিকায় রয়েছেন।
গত চার মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিদেশি শিক্ষার্থীদের ডেটা, তাদের কার্যকলাপ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তৎপরতার ওপর নজরদারি করছে।
অনেকের অভিযোগ, এই নজরদারি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে করা হচ্ছে। ফলে কোনো প্রকার অপরাধের ইতিহাস বা ক্যাম্পাস বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের ভুলভাবে চিহ্নিত করার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
গত মার্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিভোক’ নামের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। যার মাধ্যমে ভিসাধারী শিক্ষার্থীদের নজরদারি ও চিহ্নিত করা হবে। রুবিও বলেন, এই শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপও পর্যবেক্ষণ করা হবে। ‘ইহুদি বিদ্বেষ’ বা ফিলিস্তিন ও হামাসের প্রতি সমর্থনের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রমতে, যেসব শিক্ষার্থী ‘ফলস এনরোলমেন্ট’ বা ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ভিসা নিয়েছিলেন, কিংবা নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন না, তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা সর্বাধিক। তবে বাংলাদেশ, নেপাল, নাইজেরিয়া এবং চীনের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আমাদের অভিবাসন নীতিতে কোনো ধরনের ফাঁকি বরদাশত করি না। যারা শিক্ষার্থী ভিসার অপব্যবহার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
বাংলাদেশি অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে আসার কয়েক মাসের মধ্যেই এই সংকটে পড়েছেন।
নিউ ইয়র্কের এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি একটি স্বীকৃত কলেজে ভর্তি হয়েছি এবং নিয়মিত ক্লাসও করছি। কিন্তু হঠাৎ জানতে পারি, আমার ভিসা বাতিল হয়েছে। এখন আতঙ্কে আছি, যেন ডিপোর্ট করে না দেয়’।
ভারতীয় দূতাবাস ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং স্বচ্ছ তদন্ত ও ন্যায্য প্রক্রিয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেও শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে।
স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেম (এসইভিআইএস) পোর্টালটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ভিজিটরদের ট্র্যাক করে।
আইসিই–এর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এসইভিআইএস সিস্টেমে ৪ হাজার ৭৩৬ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা স্ট্যাটাস বাতিল করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই এফ১ ভিসাধারী।
ভিসা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভিসা বাতিলের নোটিশ পেয়েছেন মাত্র ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। সেটিও তাঁরা পেয়েছেন ই–মেইলের মাধ্যমে। এর মধ্যে মাত্র ২ জন শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। এছাড়া নোটিশ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। অনেক শিক্ষার্থী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নোটিশ পাননি। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। অনেকে ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ ও ব্যাখ্যা তো দূরের কথা, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না।
এআইএলএ এই প্রশাসনিক পদক্ষেপকে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, সরকারের এমন পদক্ষেপ বেশ কিছু আইনি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে এবং এর জন্য সম্ভবত আইনি লড়াইয়ের প্রয়োজন হতে পারে।
এই ভিসা বাতিলের প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ৩২৭টি ঘটনার মধ্যে ৫০ শতাংশই অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং (ওপিটি) ধারী। ওপিটি আন্তর্জাতিক এফ১ ভিসাধারী শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে ১২ মাস পর্যন্ত কাজের সুযোগ দেয়। এই শিক্ষার্থীরা স্নাতক সম্পন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত। ভিসা বাতিল হওয়ার ফলে এই শিক্ষার্থীরা এখন আর কাজ করতে পারবেন না। ভিসা বাতিলের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যেসব অঙ্গরাজ্য এর মধ্যে রয়েছে—টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, মিশিগান এবং অ্যারিজোনা।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতি এবং স্কুল কর্মকর্তাদের সঙ্গে চিঠিপত্রের পর্যালোচনায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) দেখেছে, গত মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার প্রায় এক হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল বা তাদের আইনি মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে।
আইনি মর্যাদা হারানো অনেক শিক্ষার্থীই ভারত ও চীনের। এই দুই দেশের মোট শিক্ষার্থী আমেরিকার কলেজগুলোতে অধ্যয়নরত মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অর্ধেকেরও বেশি। তবে আইনজীবীরা বলছেন, এই বাতিলের ঘটনা বিশ্বের কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ নিয়ে ভারত সরকার প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘আমরা জেনেছি, বেশ কয়েকজন ভারতীয় শিক্ষার্থী তাদের এফ ১ ভিসা স্ট্যাটাসের বিষয়ে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা পেয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আমাদের দূতাবাস ও কনস্যুলেট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ভিসা নিয়ে কঠোর নজরদারি চলছে। বিশেষ করে অনলাইন বা কম স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যারা শুধু ভিসা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে যথাযথভাবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার এবং ভিসার নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech