প্রকাশিত: ৩:০৯ পূর্বাহ্ণ, মে ২৫, ২০২৩
ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠেয় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ১১ জন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রার্থী ৪ জন, বাকি ৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ এপ্রিল থেকে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শুরু করেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ২৭ দিনে মেয়র পদে মোট ১১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে সবাই জমা দিয়েছেন।
সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের মিডিয়া সেল (সিটি নির্বাচন) কর্মকর্তা সৈয়দ কামাল হোসেন জানান, মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন ১১ জন। এর মধ্যে দলীয় প্রতীকের প্রাথী ৪ জন। তারা হলেন- মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), নজরুল ইসলাম বাবুল (জাতীয় পার্টি), হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (ইসলামী আন্দোলন) ও মো. জহিরুল আলম (জাকের পার্টি)।
মনোনয়ন দাখিল করা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা হলেন- মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, সামছুন নুর তালুকদার, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মো. শাহজাহান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ছাড়াও চারটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও ধারণা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
এই তিন প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান। তারা দুজনই স্নাতক ডিগ্রিধারী। অপর প্রার্থী জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম (বাবুল) হলফনামায় নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ বলে দাবি করেছেন।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি তাদের আয়, আয়ের উৎস, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলা, দেনাসহ বেশ কিছু তথ্য দিতে হয়। প্রার্থীদের হলফনামা ঘেঁটে শিক্ষাগত যোগ্যতার এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনজন প্রার্থীই নিজেদের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়েছেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা না থাকলেও অপর দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা ছিল এবং এখনো আছে।
প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষায় এগিয়ে থাকা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিএ (সম্মান) পাস। আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীও পেশায় ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে নেই কোনো ফৌজদারি মামলা। হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ব্যবসায়ীর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। এর বাইরে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দুটি টিভি, একটি রেফ্রিজারেটর, দুটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি), এক সেট সোফা, চারটি খাট, একটি টেবিল, ১০টি চেয়ার ও দুটি আলমারি আছে। আনোয়ারুজ্জামানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩ বিঘা কৃষি জমি, ২৩ শতক অকৃষি জমি, একটি দালান ও একটি ফ্ল্যাট। কোনো কোনো দায়-দেনা নেই এই প্রার্থীর। আর তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ৪৭ ভরি স্বর্ণালংকার।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান এলএলবি পাস। তবে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন অন্য ব্যবসা। এই প্রার্থী হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অতীতে তার বিরুদ্ধে একটা মামলা হলেও তা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। মাহমুদুল হাসানের কোনো দায়-দেনা নেই। অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে মাহমুদুলের যৌথ মালিকানায় বাণিজ্যিক দোকান ও বাড়ি আছে। এসব সম্পদের ৬ ভাগের ১ অংশ তার। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার।
প্রার্থীদের মধ্যে সম্পদে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল পেশায় একজন ব্যবসায়ী। স্বশিক্ষিত এই ব্যবসায়ীর বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৩ টাকার। এর মধ্যে রয়েছে একটি বিএমডব্লিউ ও একটি টয়োটা প্রাডো গাড়ি, চারটি কার্গো ভ্যান, আটটি কভার্ড ভ্যান এবং একটি মোটরসাইকেল। নজরুলের স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ১৩৫ দশমিক ৭৮ শতক অকৃষি-জমি, একটি ফ্ল্যাট, চারটি দালান ও টিনশেড বাড়ি। পাশাপাশি তার ঋণও আছে ৫ কোটি ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৭ টাকার। এছাড়া তার স্ত্রীর নামে আছে ২১ লাখ ১২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ।নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটা মামলা তদন্তাধীন। অতীতে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হলেও সেগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইভিএমে হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে। আর ১ জুন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৩ সাথে তৃতীয় ও ২০১৮ সালে চতুর্থ নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। চারটি নির্বাচনেই মূল প্রতিদ্বদ্বিতা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে। এবার বিএনপিদলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।
প্রসঙ্গত, সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীর ওয়ার্ড ৪২টি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ ও নারী ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪২ জন। মোট কেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১হাজার ৩৬৪টি।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech