প্রকাশিত: ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২০
বাংলা ভাষার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার বেলা ১২ঃ১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
বৃহস্পতিবার (২৬শে জুন ২০২০ইং) দুপুরে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতীয় প্রকাশনা সংস্থা দে’জ পাবলিশিং। নিমাই ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে প্রকাশনা সংস্থাটি বলেছে, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য তাঁর সাহিত্য পাঠকদের জন্য রেখে গেলেন।
নিমাই ভট্টাচার্য ১৯৩১ সালের ১০ এপ্রিল তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার (বর্তমান জেলা) শালিখা থানার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ।
নিমাই ভট্টাচার্য ভাগ্যের নির্মম অদৃষ্টে সাড়ে তিন বছর বয়সে মাতৃহীন হয়ে ভীষণ কষ্টে পিতার সীমিত আয়ের মধ্যে ভর্তি হন কলকাতা কর্পোরেশনের ফ্রি স্কুলে। কলকাতা রিপন কলেজে কিছুদিন পড়ালেখা করার পর যশোরে ফিরে আসেন। ১৯৪১ সালে তিনি যশোরের সম্মিলনী ইন্সটিটউশনে চতুর্থ শ্রেনীতে ভর্তি হন এবং নবম শ্রেনী পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেন। নিমাই ভট্টাচার্যের পিতা সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য নিজেও যশোরের সম্মিলনী ইন্সটিটিউশনের ছাত্র এবং পরবর্তীতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন কলকাতা গমনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত।
পরবর্তীতে দেশ বিভাগের পর নিমাই ভট্টাচার্য তাঁর পিতার সাথে পুনরায় কলতায় যান এবং সেখানে আবারো রিপন স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং সেখান থেকেই তিনি আই.এ পাস করেন। এবং ১৯৫২ সালে বি.এ পাস করেন।
নিমাই সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়।এবং তিনি দীর্ঘ পঁচিশ বছর দিল্লিতে ভারতীয় পত্রিকার রাজনৈতিক-কূটনৈতিক-সংসদীয় সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের স্নেহভাজন ছিলেন নিমাই ভট্টাচার্য।
তিনি বৃটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ,আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার,ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি হো চি মিন,রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্রুশ্চেভ,প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন,পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু,লালবাহাদুর শাস্ত্রী,মোরারজি দেশাই ও ইন্দিরা গাব্ধীর মতো প্রধানমন্ত্রীর সংস্পর্শে আসেন এবং সফরসঙ্গী সাংবাদিক হিসেবে নিযুক্ত থেকেছেন।
১৯৬৩ সালে তাঁর লেখা একটি উপন্যাস কলকাতার সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং তা ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।এরপর, তাঁর চারটি উপন্যাস একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। নিমাইয়ের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫০ -এর অধিক। ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই ‘রাজধানীর নেপথ্যে’।
১৯৬৮ সালে প্রকাশিত ‘মেমসাহেব’ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা। ‘মেমসাহেব’ গ্রন্থ অবলম্বনে ১৯৭২ সালে একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার এবং অপর্ণা সেন। এছাড়াও নিমাই ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘মিনিবাস’, ‘মাতাল’, ‘ইনকিলাব’, ‘ব্যাচেলর’, ‘কেরানী’, ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’, ‘অ্যাংলো ইন্ডিয়ান’, ‘ডার্লিং’, ‘ইউর অনার’, ‘ককটেল’, ‘পথের শেষে’, ‘অষ্টাদশী’, ‘ডিপ্লোম্যাট’, ‘ম্যারেজ রেজিস্ট্রার’, ‘পিয়াসা’, ‘নাচনী’।
জীবদ্দশায় সাহিত্যকর্মের জন্য অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিক।নিমাই ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে বাংলার সাহিত্য এবং সংস্কৃতি মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech