প্রকাশিত: ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ৬, ২০২৩
পৃথিবীতে প্রত্যেকটি ধর্মেরই কিছু বিধি-বিধান রয়েছে এবং প্রত্যেকটি ধর্মই মানবতাবাদী এবং এদের মধ্যে ইসলাম সবচেয়ে আধুনিক এবং সর্বকালের সেরা জীবন বিধানের দিকনির্দেশনা দান করে আমাদের।
এই জীবন বিধান যুগে যুগে বহুবার বহুভাবে বদলে গিয়েছে শুধুমাত্র জীবন এবং যুগের প্রয়োজনে। ইসলাম প্রত্যেকটি যুগের চাহিদা অনুযায়ী মুসলমানদের জীবন বিধানের যে সকল দিকনির্দেশনাগুলো দেয়, কুরআন-সুন্নাহ বা হাদিস, ইজমা বা কিয়াস এর সাহাযে তা-ই ফতোয়া বা আলেম ওলামাদের ইসলাম অনুযায়ী দিকনির্দেশনা হিসেবে আমরা মানি। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ফতোয়াকে আমরা আমাদের বাস্তবতা বা মানবতার পরিপন্থী বলে মনে করি। ইসলাম এবং পরিপূর্ণ জীবন বিধান একে অন্যের পরিপূরক। পরিপন্থী বা বিপরীত দিক নির্দেশনা নয়। যখন জীবনের কোনো সমস্যা ইসলামী ভাবাদর্শের দ্বারা সমাধান করার চেষ্টা আমরা করি তখন তা সমাধান করা প্রথমে কুরআন, হাদিস দ্বারা। এতে সমাধান না হলে আমরা ইজমা বা কিয়াস এর সাহায্য নেই। এতেও সমাধান না হলে পরবর্তীতে আলেমদের সহায়তায় এই সমস্যার সমাধানের জন্য যে দিকনির্দেশনা বা যেভাবে চলার নিয়ম নির্ধারণ করা হয় তা-ই হচ্ছে আসলে ফতোয়া। ঠিক তেমনি আমরা যখন বিভিন্ন অপরাধের যে সকল শান্তির কথা বিধান করি তাও এই ফতোয়া দ্বারাই নির্ধারণ করা হয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপরাধের শাস্তিতে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ফতোয়ার ভয়াবহতা আমরা দেখি কিন্তু এর জন্য শুধুমাত্র আলেমরাই দায়ী তা নয় আমাদের মুসলমানদের ধর্মীয় অজ্ঞতাও এর জন্য দায়ী।
বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে অস্থিরতায় ইসলামের ছায়ায় বা ইসলামী জীবন বিধানের প্রতি মানুষের আকৃষ্টতা বাড়ছে এবং এখন দেখা যায় মানুষ অপরাধের শাস্তির কথাও অনেক সময় ইসলামিক মতবাদ অনুযায়ী ধার্য রকার কথা চিন্তা করে। মানুষ যখন তাদের নিজেদের জন্য একটা শান্তিপূর্ণ জীবন এবং সমাজ চায় তখন মানুষ তার সমস্যার কোনো সমাধান না পেয়ে ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং নিজের চাওয়া-পাওয়ার মূল্যবোধটা ইসলামের মূল্যবোধ দিয়ে যাচাই করে। যখন এই চাওয়া-পাওয়ার অপছন্দনীয় সাদৃশ্য উভয় দিক থেকে মিলে যায় তখন মানুষ নিজেকে ইসলামের দিকে সমর্পণ করে। নিজের সমস্ত দায়-দায়িত্ব আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়। যে সমস্যার সমাধান বা যে ব্যাধির ঔষধ কোনোভাবেই মানুষ অর্জন করতে পারে না তখন মানুষ নিজের তাগিদেই ধাবিত হয় আশার পথ ধরে। নিশ্চয়ই আমাদের সাহায্য করবার জন্য কোনো মহাশক্তি রয়েছেন এবং আমরা তার সাথেই নিশ্চয়ই মিলিত হবো। খেয়াল করে দেখনে পাঠকরা আমার মত স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মনের কথাটি মিলে যাচ্ছে একটি আয়াতের সাথে।
‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’।
যার অর্থ- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।
সত্যিকার অর্থেই যে সমস্যার সমাধান কেউ করতে পারবে না। যার জন্য মানুষের কাছে জীবন-মৃত্যু সমান হয়ে যায় তখন মানুষের ব্যাকুল মন আল্লাহর সাহায্যের জন্য পথ খুঁজতে থাকে। তখন মনে হয় কোথায় যাব, কোথায় একটু শান্তি পাব। তার চেয়ে আল্লাহর কাছে গেলেই শান্তি খুঁজে পাওয়া যাবে। দেখুন, এ ক্ষেত্রে মনে হয় এটাই আমাদের শেষ পরিণতি কিন্তু না আরুাহ বলেছেন, আমরা মুসলমানরা যেন তার রহমত থেকে নিরাশ না হই। তাই এই অনুপ্রেরণায় আমরা আল্লাহর কাছে মনে মনে চাই যেন আল্লাহ আমাদের আরো কিছু দিয়ে আরেকটু খুশি করে দেন এবং আমাদের এই বিপদ থেকে বা মৃত্যুসম সমস্যা থেকে মুক্তি দেন।
‘আল্লাহুম্মা আজিরনী ফি মুছাবাতা ওয়াখলিফ লা খাইরাম মিনহা’।
যার অর্থ- হে আল্লাহ, আমার বিপদে আমাকে প্রতিফল দিন এবং এর বিনিময়ে আমাকে আরো উত্তম প্রতিদান দিন।
এই কথাগুলো তখন দোয়ায় রূপ নেয় এবং আল্লাহর কাছে তখন আমরা অজান্তেই আত্মসমর্পণ করি।
এই বর্তমান পৃথিবীর ভয়াবহ রোগ-ব্যাধি (যেমন-করোনা), ভয়াবহ পারমাণবিক হামলা, ভয়াবহ যুদ্ধ পরিণতি, অস্থিতিশীল অর্থনীতি, বাজারের ঊর্ধ্বগতি, নিজের সন্তানদের কিশোর গ্যাং হয়ে যাওয়া, সাধ্যের অতিরিক্ত সাধের জন্য পরিবারের ঋণগ্রস্থতা বিভিন্ন ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদেরকে গ্রাস করে যেখানে আমাদের অসহায়ত্ব দায়ভার সমাজ বা পরিবার নিতে পারেনা বা নেয়ার সামর্থ্যও থাকেনা। তখন আমরা আল্লাহকেই ডাকি। এই ভয়াবহ, অসহায়, অস্থির সমাজের সবার জন্য দোয়া করি যেন আল্লাহ আমাদেরকে সচেতনভাবে চিন্তা-ভাবনা করার শক্তি দান করেন। কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ তা বোঝার শক্তি দান করেন। চিন্তা করার গভীরতা এবং উৎসাহ দান করেন। অস্থিরতা পরিহার করে লক্ষ্যে স্থির এবং অটল হবার শক্তি দান করেন। আমাদেরকে জ্ঞান এবং ইলম দান করুন। কর্মস্পৃহা দান করুন। সেই সাথে দান করুন সততা, নিষ্ঠা এবং পরোপকারীতার মত মহৎ গুণও। আমীন।
লেখক : গৃহিণী, সিলেট।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech