সংসারে হাল ধরা একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে বাবা নিশ্চুপ, বোনের কান্না, মায়ের আর্তনাদ

প্রকাশিত: ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২৪

সংসারে হাল ধরা একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে বাবা নিশ্চুপ, বোনের কান্না, মায়ের আর্তনাদ

ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: গত শুক্রবার ১৮ জুলাই দুপুরে ঢাকার বাড্ডায় কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে মারা যান শিহাব নামে একটি ছেলে। সে ঢাকার বাড্ডার লিংকরোড এলাকার তার ফুপাতো ভাই মনির মোল্লার হাসান স্টিল এন্ড ফার্নিচার এ কাজ করতো।

 

 

জানা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মনির মোল্লার বোনের বাসায় দুপুরের খাবার খেতে যায় সে। খাবার শেষ করে পাশেই কারখানাতে ফিরতে গিয়ে রাস্তা পার হতে গেলে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় সড়ক। তখনই একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় শিহাবের শরীরে। বুকের পাশ দিয়ে বিদ্ধ হয়ে ওপর পাশ দিয়ে বেড়িয়ে যায় গুলি। তখন ওই এলাকার মসজিদের এক ইমাম (পূর্ব পরিচিত) সঙ্গে ছিল শিহাবের।

 

 

পরে তিনি খবর দেন ফার্নিচার দোকানে। এ খবর পেয়ে ফার্নিচার দোকানের মালিক ফুপাতো ভাই মনির মোল্লা স্থানীয় এক হাসপাতালে গিয়ে শিহাবকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। চিকিৎসা না পেয়ে বনশ্রী এলাকার নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

 

 

নিহত শিহাবের বাবা শাহ আলম হাওলাদার আট বছর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কাঁধে আঘাত পান । এরপর ভারী কোনো কাজ করতে পারতেন না। এরইমধ্যে হার্টে সমস্যা দেখা ছিলো। এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসারে তৈরি হয় আর্থিক টানাপড়েন।

 

 

 

হাল ধরতে সেলাই’র কাজ বাধ্য হন স্ত্রী নাছিমা বেগম। পরিবারের সংসার কোনোমতে চলতে থাকে। পরে একমাত্র ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া হৃদয় আহমেদ শিহাব সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজে যোগদান করে। ফার্নিচারের দোকানে প্রায় ৩ বছর ধরে কাজ করতো শিহাব। বেতন যা পেতো নিজের খরচ রেখে বাকিগুলো বাড়িতে পাঠিয়ে দিতো। এমন আকস্মিক মৃত্যুতে সংসারের হাল কেবল ধরতে শেখা হৃদয় আহমেদ শিহাবের পরিবার ভেঙে পড়েছেন । বাবার ও মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো গ্রামে।

 

 

 

শুক্রবার রাতে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার সন্যাসীর চর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামে মরদেহ এসে পৌঁছে। শনিবার তার দাফন সম্পন্ন হয়। পরিবারে শোকে বাকরুদ্ধ বাবা নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকেন ঘরের এক কোনে। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে আর্তনাদ করে উঠছেন বোন, অন্যপাশে মায়ের কান্না যেন থামছেই না। শোকে আচ্ছন্ন স্বজন-প্রতিবেশী।

 

 

 

নিহত শিহাবের চাচা সাহাবুদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান ছিল শিহাব। আমার বড় ভাইয়ের ছেলে। তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিল শিহাব।

 

 

 

0Shares