সিলেটে সন্ত্রাসী জগতের এক খলনায়ক পিযুষ কান্তি দে

প্রকাশিত: ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪

সিলেটে সন্ত্রাসী জগতের এক খলনায়ক পিযুষ কান্তি দে

বিশেষ প্রতিবেদন পর্ব – ১

 

 

সোহেল আহমদ,  :: সিলেটের সন্ত্রাসী জগতের এক খলনায়ক পিযুষ কান্তি দে। সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তিনি । তার নির্দেশেই সংগঠিত হতো সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, লুটপাট, চাঁদাবাজি, অপহরণ, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসাসহ নানান অপরাধ। কোথায় কি হবে, কারা করবে, এসব কিছু নির্ধারণের জন্য তার আলাদা গ্রুপও রয়েছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো তার অত্যন্ত আস্তাভাজন লোকেদের দিয়ে এসব কাজে করাতো সে। যাদের সে বিশ্বাস করতো।

 

 

মূলত তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সব ধরনের অপরাধ সংগঠিত হতো কারা কোন এলাকায় অবস্থান করবে? কিভাবে করবে? আর এসবগুলো মাস্টারপ্লান করা হতো মির্জাজাঙ্গাল আশ্রমের পাশের বিল্ডিং একটি বাড়ির ছাদে সেটা দীর্ঘদিন ধরে দখল করে ভোগ করছে। অনেকে ভয়ে কিছু বলতো না। এই এলাকাজুড়ে জনসাধারণের মনে ছিল এক আতঙ্ক। আর সেই আতঙ্কের খলনায়কের ভূমিকায় ছিলেন পিযুষ কান্তি দে।

 

 

সিলেটের মির্জাজাঙ্গাল থেকে শুরু করে দাড়িয়া পাড়া, জিন্দাবাজার,বন্দরবাজার,চৌহাট্টা পয়েন্ট,লামাবাজার, রিকাবীবাজার, কুয়ারপার, মিরের ময়দান, জিতুমিয়ার পয়েন্ট, শেখঘাট কলাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় চলতো তার অপরাধমূলক কার্যক্রম।

 

আলাদা-আলাদা গ্রুপে ভাগ করা ছিলো তার মিশন টিম। সেই গ্রুপে অনলাইন ডলার সিন্ডিকেট মার্কেটিং সাইট এক গ্রুপ নিয়ন্ত্রন করতো সজল দাস অনিকসহ বেশ কয়েকজন মিলে আর সরাসরি বিভিন্ন এলাকাগুলোর রাস্তায় অবস্থান করে মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজি চালিত গাড়ি দিয়ে প্রতিদিনই ছিলো তাদের ছিনতাই (নগদ টাকা, মোবাইল, মানিব্যাগ, লেডিসব্যাগ, স্বর্ণ) করা। অপর দিকে মানুষের জায়গা দখল করা, ইয়াবা ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করা সব কাজ হতো রিফাত, সাগর, ইফাতসহ বেশ কয়েকজন মিলে আরেকাট গ্রুপ। তবে সেই কাজের বিনিময়ে কোতোয়ালী থানা, বন্দরবাজার পুলিশ ফাড়ি, লামাবাজার পুলিশ ফাড়ি সহ বিভিন্ন ফাড়ি ও থানাগুলোতে  কমিশন হিসেবে সপ্তাহে অসাধু কর্মকর্তাদের হাতে চাদা দেয়া হতো।

 

 

 

বেশ কয়েকমাস পূর্বে রিফাত নামে পিযুষ গ্রুপের এক ছিনতাইকারী শারিরীক অসুস্থতায় মারা যায়। তবে তার খালি জায়গাটা পূরণ করে অন্য আরেকজনকে অবগত করে তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছে।

 

অন্যদিকে, পিযুষ ও তার কর্মীদের বিভিন্ন মামলা-মকদ্দমার সকল কাজ করা জেল থেকে বের করা, কোর্টে জামিন করানো এসব কিছুর দ্বায়িত্ব পালন করতেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আইনজীবী প্রবাল চৌধুরী পূজন। এজন্য তাকেও একটি কমিশনের ভাগ দিতে হতো।

 

 

যখন স্বেচ্ছাসেবকলীগে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ঠাই হয়েছিলো তখন থেকে তার অপরাধমূলক কার্যক্রম আরো বাড়তে থাকে। সাধারণ মানুষের জায়গা দক্ষল করা থেকে শুরু করে ডলার সিন্ডিকেট ব্যবসা শুরু হয় ব্যাপকহারে।

 

বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনে সিলেটে যে নেতা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন তিনি হলেন পীযূষ। নানা অপকর্ম তার মাধ্যমে সৃষ্ট হওয়ার কারণে ঘটনার আবর্তে ঘুরপাক খাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টার্গেট ছিল তার ওপর।

 

 

 

নগরীর জিন্দাবাজার-লামাবাজার সড়কের মির্জাজাঙ্গালে আস্তানা গড়ে তুলে নিজের কর্মীবাহিনী দিয়ে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় তাঁর আস্তানা আছে। তাঁর বাহিনীর যন্ত্রণায় লোকজন অতিষ্ঠ। এনিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

 

গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ইং বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে মির্জাজাঙ্গাল এলাকা থেকে পিযুষ সহ আরো ৩ সহযোগী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব -৯ ।

 

 

এসময় উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি রিভলবার, দুটি গুলি ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও মাদক। তার বিরুদ্ধে একাধিক থানা এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল, অস্ত্র আইনসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলা রয়েছে। বুধবার মধ্যরাতে র‍্যাব-৯ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক ক্ষুদেবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

 

গত ২০১৯ সালের ২২শে জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর কুয়ারপাড় এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় পীযূষের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। গ্রেফতারের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, নারী নির্যাতন ও অস্ত্র আইনে মোট ১০টি এবং জালালবাদ থানায় মারামারির ঘটনায় আরও একটি মামলা রয়েছে।

 

 

ঐদিন নগরীর বন্দর পয়েন্টে থাকা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামানের নেতৃত্বে বিরাট ভূমিকা পালন করেন। এসময় ক্ষমতাসীন দলে থাকা আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ায় শুরু হয়। এ সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষে অন্তত৫০ জন আহত হন।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ