রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় চিন্ময়কে গ্রেফতার করা হয়েছে

প্রকাশিত: ৯:০৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২৪

 

 

 

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কোনো সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে নয়, বরং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং ২৪-এর আকাঙ্ক্ষাকে যারাই নষ্ট করার চেষ্টা করবে, ষড়যন্ত্র করবে, তাদের অপরাধী হিসেবেই আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

 

মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পাওটানা মহাবিদ্যালয় মাঠে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

 

উপদেষ্টা আসিফ বলেন, এখানে সম্প্রদায় বিবেচনায় নয়, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যদি কেউ রাষ্ট্রদ্রোহিতার ঘটনায় যুক্ত থাকে, সে যেই হোক, যত বড় নেতাই হোক, তাকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।

 

তিনি বলেন, আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই। বাংলাদেশের কোনো সম্প্রদায় শুধু সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের কারণে যাতে বঞ্চিত বা নিগ্রহের শিকার না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না।

 

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, আন্দোলনের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করতে এখনো একটি মহল সক্রিয়। তারা বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার নামে গ্রামের সাধারণ মানুষের টাকার বিনিময়ে ঢাকায় এনে আন্দোলন করার চেষ্টা করেছিল। এর মধ্যে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামের ওই সংগঠনের আহ্বায়ককে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

 

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যারা জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের আমরা যেন ভুলে না যাই। সরকার প্রতিটি শহিদ পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া কর্মসংস্থানসহ বাংলাদেশ সরকার যেন সারা জীবন এই শহিদ পরিবার ও আহতদের পাশে থাকে তা নিশ্চিত করা হবে।

 

আসিফ বলেন, ইতোপূর্বে বাংলাদেশে এলাকাভিত্তিক বৈষম্য ছিল। যে এলাকায় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী হয়েছে সেই এলাকায় উন্নয়ন হয়েছে। আমরা বৈষম্য নিরসন করে সারা দেশে উন্নয়ন করতে চাই।

 

বাজেটসহ অন্যান্য বিষয়ে রংপুরকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় গোপালগঞ্জসহ দুই একটি জেলার উন্নয়ন করা হয়েছে। বাকি জেলাগুলোর সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে রংপুরবাসী আর কোনো বৈষম্যের শিকার হবে না। কারণ এখানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদ সমাহিত রয়েছেন।

 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বিকল্প তৈরি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের রাখা হবে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে অনেক নাগরিক সেবা দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেজন্য এই কাঠামোগুলো রয়েছে। অতি দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

এ সময় ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহিদের পরিবারের সদস্য রাজমিস্ত্রী শহিদ মঞ্জু মিয়ার স্ত্রী রহিমা খাতুন, গার্মেন্টসকর্মী শহীদ মামুন মিয়ার বাবা আজগর আলী এবং শহীদ সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রানী বেগম তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, এলজিইডি রংপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুল ওহাব খান, পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব ও রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন প্রমুখ।

 

অনুষ্ঠানে পীরগাছার ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন তিস্তা নদীর ওপর পীরগাছা থেকে কুড়িগ্রামের উলিপুরে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে পানিয়ালের ঘাট থেকে তিস্তা নদীর উপর দিয়ে উলিপুরের থেতরাই পর্যন্ত একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান।

 

মতবিনিময় সভায় বক্তারা রংপুর অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বন্ধ চিনি কলগুলো চালু করা, কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা, কৃষি ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন দাবি জানান। পরে ৬ শতাধিক অসহায়-দুস্থ পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ করা হয়।

 

অনুষ্ঠান শেষে তিনি রংপুরের পীরগাছা ও কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে তিস্তা নদীর ওপর প্রস্তাবিত সেতু নির্মাণের জন্য পানিয়ালের ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় উলিপুর উপজেলার শত শত মানুষ তাদের দাবি জানাতে পানিয়ালের ঘাটে উপস্থিত হন। এছাড়া নবনির্মিত পীরগাছা উপজেলা পরিষদ ভবন উদ্বোধন করেন।

 

পরে বিকালে কাউনিয়া উপজেলায় অসহায় ও দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

0Shares